পুলিশ বিভাগের ওপর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রভাব বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে মানবাধিকার এবং জবাবদিহি নিশ্চিতে বাড়ানো হবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিধি। পুলিশ সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার কমানো, মব কন্ট্রোলে জাতিসংঘের পদ্ধতি প্রয়োগ করার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে থাকছে। কর্মঘণ্টা, মেডিকেল কোর গঠন এবং স্থায়ী পুলিশ কমিশনের জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে সংযোজন হিসেবে।
২০০ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং ২০ পৃষ্ঠার সুপারিশমালা সন্নিবেশিত করে বহুল আলোচিত এবং কাঙ্ক্ষিত পুলিশ সংস্কার প্রতিবেদন জমা হচ্ছে আগামীকাল। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে দিনের প্রথমভাগেই তা জমা দিতে যাবেন কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেনের নেতৃত্বে ৯ জন সদস্য।
জানা গেছে, ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক পুলিশ সংস্কার কমিশনের অনলাইন জনমত জরিপে মোট ২৪ হাজার ৪৪২ জন মতামত দিয়েছেন। জরিপে ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চেয়েছেন। একই সঙ্গে পুলিশ বাহিনীকে জবাবদিহির আওতায় আনতে পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। জরিপে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে চরম মানবিকতার লঙ্ঘন বিবেচনায় অপরাধী পুলিশকে জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনার পক্ষে মত দেন ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা। ভুয়া বা গায়েবি মামলার অপসংস্কৃতির সংস্কার চান শতকরা ৯৫ জন। গত রাতে পুলিশ সংস্কার প্রতিবেদনে কী থাকছে- এমন বিষয় নিয়ে কথা হয় কমিশনের সদস্য সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইকবালের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলে কীভাবে পুলিশকে মানবাধিকার নিশ্চিত এবং জবাবদিহির মধ্যে রাখা যায় সে বিষয়েই আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ গত জুলাই-আগস্টে পুলিশের নৃশংসতার রূপ দেশবাসী দেখেছে। কীভাবে একটি জনবান্ধব বাহিনী সমুন্নত রাখা যায় তাই মূল ফোকাস থাকছে প্রতিবেদনে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়োগের বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আনতে চাইনি। কেন আমরা দীর্ঘদিনের প্রচলিত নিয়মে হস্তক্ষেপ করব? এটা কি বড় কোন বিষয়? তবে নির্বাহী বিভাগ এবং পুলিশ বিভাগের মধ্যে অদৃশ্য প্রতিযোগিতা নিরসনের সুপারিশ করা হবে। কর্মঘণ্টা নির্ধারণসহ বেশ কিছু সুপারিশ থাকবে। পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন রাজনীতিবিদরা। এর জন্য অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হবে। তাই তাদের হাতেই এ বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া উচিত।’
গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার নাজমুল করিম খান বলেন, ‘পুলিশ কমিশনের বিষয়টি রাজনৈতিক নেতাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। আমরা দুই স্তরে নিয়োগের বিষয়টিসহ বেশকিছু গঠনমূলক প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের প্রত্যাশা সংস্কার কমিশন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেবেন।’ তবে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘পুলিশকে অবশ্যই জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি যাতে পুলিশকে তাদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নইলে এত শ্রম, কষ্ট, সময় সবকিছুই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।’