শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ অপেক্ষার পর ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠগুলোতে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে, নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে। কবে হবে এ নির্বাচন- তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার অন্ত নেই। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের চাপে এ নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেও তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা দেয়নি বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়। এখন পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর ছাড়া কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ নির্বাচনের দিন-তারিখ জানায়নি। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। কোনো দিন-তারিখ ঘোষণা না করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধির চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। টাইমলাইন অনুযায়ী, চলতি মাসের মাঝামাঝিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা জানানো হয়েছে। ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এত আয়োজন থাকলেও বাস্তবে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা নির্বাচনের আগে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের কথা বলেছিলেন। ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পর সম্প্রতি এ গঠনতন্ত্রে বেশকিছু সংস্কার এনেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ সংস্কারে ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রস্তাবনাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডাকসু নির্বাচন আমাদের প্রাণের দাবি। কিন্তু আমরা ডাকসু গঠনতন্ত্র সংশোধনসহ কিছু দাবি জানিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংস্কার প্রস্তাবগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এর খুব বেশি প্রতিফলন আমরা দেখিনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের আনাগোনা রয়েছে। যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচার হতে হবে। নইলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হবে না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভোট নিয়ে যেন ভয়ের কোনো শঙ্কা না থাকে, এটি নিশ্চিত করতে হবে। ডাকসু নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব সম্পন্ন করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) গঠনতন্ত্র অনুমোদন করেছে। এ ছাড়া রাকসু ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আগামী জুনের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে রাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। রাকসুর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও তা এখনো প্রকাশ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলেও এখনো কোনো সভা হয়নি। এমন অবস্থায় রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, খসড়া ভোটার তালিকা অর্ধেক পাওয়া গেছে। বাকিগুলো ৫ মে হাতে পেলে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। সব হলের তথ্য না পাওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত সময়েই নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কাজ চলমান আছে।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের দাবিতে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন সরব থাকলেও এর কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। আগামী ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে জুনের মধ্যে চাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি থাকলেও এ ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। তবে সর্বশেষ সিন্ডিকেট বৈঠকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ছাত্র সংসদ কাজ করবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে। সবার আলোচনারভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ নির্বাচন দিতে হবে।