আগামী ২১ জুন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির পক্ষ থেকে অনুমতি পেতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে আবেদনও করা হয়েছে। গতকাল দলটির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তিনি বলেন, আগামী ২১ জুন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার জন্য ডিএমপির কাছে আবেদন করা হয়েছে। সমাবেশে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, এটা নির্ভর করছে উদ্যান বরাদ্দের ওপর। প্রস্তুতিও চলছে। তবে এখনো সবকিছু ঠিক হয়নি। সব ঠিক হলেই আমরা জানিয়ে দেব।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এরপর রাজধানীতে একাধিক সমাবেশ করে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। জামায়াতের পক্ষ থেকে রাজধানীতে বড় কোনো সমাবেশ করতে দেখা যায়নি। তবে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এ টি এম আজহারুল ইসলাম কারাগারে থাকা অবস্থায় তার মুক্তির দাবিতে পল্টনে সমাবেশ করেছিল দলটি।
জামায়াতের নিবন্ধন আপিলের রায় আজ : রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে আজ। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানা যায়। এতে আজকের কার্যতালিকায় জামায়াতের আপিল আবেদনটি রায়ের জন্য ১ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে। এর আগে ১৪ মে শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করে দেন। সেদিন জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক। সঙ্গে ছিলেন মোহাম্মদ শিশির মনির। আর নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
জানা যায়, ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেওয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়। তাঁরা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আর্জি জানান।
ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (পরে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের (বর্তমানে অবসর) হাই কোর্ট বেঞ্চ ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। রুল জারির পর ওই বছরের ডিসেম্বরে একবার, ২০১০ সালের জুলাই ও নভেম্বরে দুবার এবং ২০১২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে দুবার জামায়াত তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এসব সংশোধনে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়। এরপর ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন (বর্তমানে অবসর), বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (পরে আপিল বিভাগের বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন) ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হকের (১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করেন) সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্টের বৃহত্তর (লার্জার) বেঞ্চ।
একই বছরের ৫ আগস্ট এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পরে একই বছরের ২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। এরপর ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হয়। গত বছর ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটলে আপিলটি পুনরুজ্জীবনের জন্য আবেদন করে জামায়াত। ২২ অক্টোবর আদালত বিলম্ব মার্জনা করে আপিলটি শুনানির জন্য রিস্টোর অর্থাৎ পুনরুজ্জীবন করেছেন। এরপর ৩ ডিসেম্বর আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়।