দেশে গায়েবি মামলার সংস্কৃতি গোটা ব্যবসায়িক পরিবেশকে গভীর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পরশু চট্টগ্রাম থেকে একজন জানালেন, তাঁর নামে আবার একটি হত্যা মামলা হয়েছে। ১১০ কিংবা ১৭০ জন আসামির মধ্যে তিনি ৯৫ নম্বরে। এই গায়েবি মামলার সংস্কৃতি আমাদের ব্যবসায় পরিমণ্ডলকে চরম অনিশ্চয়তায় ফেলছে। আমরা পার্থক্য করতে পারছি না কাকে দোষী বা নির্দোষ বলব। পুরো সমাজে সন্দেহের পর্দা ঢেকে দেওয়া হয়েছে।’
বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি গৎবাঁধা এবং সাশ্রয়ী হলেও কার্যকর নয়। বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিসর খুবই সীমিত। উপদেষ্টামণ্ডলীতে শুধু অর্থনীতিবিদ থাকলেই হবে না, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সংশ্লিষ্টতা প্রয়োজন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম রাজনৈতিক উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব নয়। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম ভিন্নধারার বাজেট দেখব। কিন্তু এটি কোনো নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারেনি। বাজেটে সরকারের চরিত্র ফুটে ওঠে; সেটা কল্যাণমুখী নাকি লুটপাটের। এ বাজেট নতুন কোনো উদাহরণ তৈরি করতে পারেনি।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাজেটে বৈষম্য হ্রাসের কোনো যথার্থ পদক্ষেপ নেই। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ এখনো জিডিপির ২ শতাংশের নিচে। মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমলেও তা পর্যাপ্ত নয়।’
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘তরুণদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাজেটে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসেনি। এক পা এগোলেও দুই পা পিছিয়েছে।’ তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এনামুল হক খান বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের পর কী করণীয়- তা বাজেটে অনুপস্থিত। আমরা এখনো প্রস্তুত নই।’ বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমইএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘অস্বস্তিকর সময় পার করছি। উপদেষ্টাদের বলব- এসি কক্ষ থেকে বেরিয়ে বাস্তবতা দেখুন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সোশ্যালিস্ট লেবার ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি দৌলত আক্তার মালা।