জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় আজ ঘোষণা করা হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিকাল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, জুলাই শহীদ পরিবারের প্রতিনিধি ও আহত যোদ্ধাদের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন। রাতে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন বলে প্রত্যাশা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের সামনে লাখো কণ্ঠে জুলাইয়ের গান ‘কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা...’ গাওয়া হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ২১টিতে সংক্ষেপে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল কায়েমের সমালোচনা করা হয়েছে। ‘পিলখানা ট্র্যাজেডি’ ‘শাপলা চত্বরে গণহত্যা’র বিষয়েও এখানে উল্লেখ আছে।
খসড়া ঘোষণাপত্রের একটি দফায় বলা হয়েছে, জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট একটি অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। বাকি দফাগুলোতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে। খসড়ার একটি দফায় বলা হয়েছে, ‘ছাত্র-গণ অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। বিশেষত সংবিধানের প্রস্তাবনায় এর উল্লেখ থাকবে এবং তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে।’ খসড়ায় যেভাবে বলা আছে সেভাবে এটি গৃহীত হলে জুলাই ঘোষণাপত্র ভবিষ্যতে সংবিধানের অংশ হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে বিএনপির কিছুটা ভিন্নমত আছে। তারা জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের প্রস্তাবনায় না রেখে চতুর্থ তফসিলে রাখার পক্ষে। খসড়ায় বলা হয়েছে, এই ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন জুলাই ঘোষণাপত্রের অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। পাশাপাশি ‘৩৬ জুলাই’ উদ্যাপনে দিনভর নানা আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঐতিহাসিক এই দিবস উদ্যাপনে দেশের শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, বয়োজ্যেষ্ঠ নারী-পুরুষ সবাইকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ৩৬ জুলাই উদ্যাপনের আয়োজনে থাকছে ৬৪ জেলায় ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে’ সকাল ৯টায় পুষ্পস্তবক অর্পণ। পাশাপাশি সারা দেশের প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ ‘বিজয় মিছিল’ নিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এসে সমবেত হবেন। এদিন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সব সার্কেল অফিস নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে রাস্তার পাশে বা নিজস্ব জায়গায়, ট্রাফিক ইন্টারসেকশনে বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ রোপণ করবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জুলাই নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টারি ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে।
জুলাই গণ অভ্যুত্থান দিবসের অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে থাকছে সকাল ১১টায় ‘টং’-এর গান, ১১টা ২০ মিনিটে সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী, ১১টা ৪০ মিনিটে কলরব শিল্পী গোষ্ঠী, ১২টা ৫ মিনিটে নাহিদ, সাড়ে ১২টায় তাশফির সংগীত পরিবেশন করবেন। বেলা ১টায় নামাজের বিরতির পর একে একে পারফর্ম করবেন চিটাগাং হিপহপ হুড, সেজান এবং শূন্য ব্যান্ড। এরপর ২টা ২৫ মিনিটে ‘ফ্যাসিস্টের পলায়ন ক্ষণ’ উদ্যাপন করা হবে। ‘পলায়ন ক্ষণ’ উদ্যাপনের পর আবারও শুরু হবে কনসার্ট। একে একে পারফর্ম করবেন সায়ান, ইথুন বাবু ও মৌসুমি, সোলস এবং ওয়ারফেজ। একে একে পারফর্ম করবে বেসিক গিটার লারনিং স্কুল, এফ মাইনর এবং পারশা। মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পারফর্ম করবেন এলিটা করিম। তাঁর পারফরম্যান্সের পর অনুষ্ঠিত হবে স্পেশাল ড্রোন ড্রামা। ড্রোন শো-এর পর সংগীত পরিবেশন করবে জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ ছাড়াও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউজুড়ে দিনভর থাকছে উৎসবমুখর নানা আয়োজন। এ ছাড়া ‘নোটস অন জুলাই’ জুলাইয়ের কিছু নির্বাচিত ছবি দিয়ে পোস্টকার্ড ডিজাইন করা হবে, যা জনসমাগমের মধ্যে ভলান্টিয়াররা নিয়ে ঘুরবেন এবং জনগণ ইচ্ছামতো পোস্টকার্ড নিয়ে নিজেদের জুলাইয়ের অভিজ্ঞতা লিখতে পারবেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় থাকছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। আর সহযোগিতায় থাকছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়।
এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়। অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের সমাগমকে ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আগামী নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।