জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শেষ সাক্ষী মো. আলমগীরকে আসামি পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় বিচারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ধাপ। পরে প্রসিকিউশন পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী রবিবার দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ২৮ কার্যদিবসে এ মামলায় ৫৪ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো।
অন্যদিকে ঢাকার আশুলিয়া থানার সামনে ছয় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আরও এক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত হয়েছে। গতকাল বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ-২ এ প্রসিকিউশনের ১৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন গত বছর ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানায় কর্মরত থাকা এএসআই মনিরুল। তিনি জবানবন্দি দেওয়ার সময় ভিডিও দেখে সাত আসামিকে শনাক্ত করেন। এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলায় আজ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলায় এ পর্যন্ত ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আসিফ মাহমুদ প্রসিকিউশনের ১৯তম সাক্ষী হিসেবে নিজের জবানবন্দি তুলে ধরবেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত কর্মকর্তার মো. আলমগীরকে গতকাল চতুর্থ দিনের মতো জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন। এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু করে তিন কার্যদিবসে ৩০ সেপ্টেম্বর জবানবন্দি শেষ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। সেদিনই তাকে জেরা শুরু করেন আইনজীবী আমির হোসেন।
গতকাল সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আমরা ৫৪ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছি। সাক্ষীদের জবানবন্দির মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, রবিবার থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হবে।
অন্যদিকে আসামি পক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি সাক্ষীদের জবানবন্দিতে এখন পর্যন্ত যা এসেছে, তাতে আমার আসামিরা নির্দোষ তা প্রমাণ করতে পারব। তিনি বলেন, সাক্ষীরা যেসব জবানবন্দি দিয়েছেন, জেরায় তাদের সেসব জবানবন্দির অনেক অসঙ্গতি বের হয়ে এসেছে। এ ছাড়াও শেখ হাসিনার বিষয়ে মারণাস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে নির্দেশ দাতা হিসেবে যে ডকুমেন্টগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি মনে করি সেই ডকুমেন্টগুলো ভুয়া।
এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলার বাকি দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকালও তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। জেরার সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামীম প্রমুখ। গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। পরে সম্পূরক আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আরও তিনজনকে সাক্ষী করা হয়েছে।