চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে বড় ধরনের ধস নেমেছে। গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এবার নয়টি সাধারণ এবং মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬১ জন ফলপ্রার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার ৯৬০ জন। পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ফেল করেছেন। শতাংশের হিসাবে প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করতে পারেননি। এদিকে শুধু পাসের হার নয়, এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও লক্ষণীয়ভাবে কমেছে। সারা দেশে উত্তীর্ণদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৯৭ জন। গত বছর পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। অর্থাৎ এ বছর জিপিএ-৫ কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪টি। আর গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। গত ২১ বছরের মধ্যে এইচএসসি ও সমমানে এ ফল সর্বনি¤œ বলে জানা গেছে। গতকাল সকাল ১০টায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার সভাকক্ষে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় অন্য শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রকাশিত ফলাফল অনুসারে এবার এইচএসসিতে পাসের হার ৫৭ দশমিক ১২, আলিমে ৭৫ দশমিক ৬১ আর কারিগরি বোর্ডে ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। আর পিছিয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২। আর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ৪৮ দশমিক ৮৬। এ ছাড়া রাজশাহীতে ৫৯ দশমিক ৪, যশোরে ৫০ দশমিক ২, চট্টগ্রামে ৫২ দশমিক ৫৭, বরিশালে ৬২ দশমিক ৫৭, সিলেটে ৫১ দশমিক ৮৬, দিনাজপুরে ৫৭ দশমিক ৪৯ এবং ময়মনসিংহে ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।
এদিকে ফলাফলে বরাবরের মতো এবারও পাসের হারে এগিয়ে ছাত্রীরা। এবার উত্তীর্ণদের মধ্যে ৫২ দশমিক ১৭ শতাংশ ছাত্র ও ৬১ দশমিক ৪৫ শতাংশ ছাত্রী। সব বোর্ডে মোট ছাত্রের তুলনায় ৫৯ হাজার ২৩২ বেশি ছাত্রী পাস করেছেন। আর ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীরা ৫ হাজার ৯৭ জন জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছেন।
শতভাগ পাস ৩৪৫ প্রতিষ্ঠানে, সব ফেল ২০২টিতে : এইচএসসি ও সমমানের ফলে এবার ৯ হাজার ৩০২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪৫টিতে সবাই পাস করেছেন। আর ২০২টিতে কেউ পাস করতে পারেননি। গত বছর শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৮৮টি। আর সব ফেল করেছিল ৬৫টি প্রতিষ্ঠানে। সে হিসেবে এবার শতভাগ পাস করা কলেজের সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ৪৩টি। আর শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১৩৭টি। উল্লেখ্য, বিদেশে আট কেন্দ্রে ২৯১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ২৭৯ জন। গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৮।
ফলাফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন : এইচএসসির ফলাফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করা যাবে আজ শুক্রবার থেকে। চলবে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত। শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে (https://rescrutiny.eduboardresults.gov.bd) গিয়ে মোবাইল নম্বর দিয়ে আবেদন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি পত্রের জন্য ১৫০ টাকা দিতে হবে।
অন্যদিকে এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর রাজধানীর কলেজগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকঢোল বাজিয়ে, নেচে-গেয়ে উল্লাস করেন তাঁরা। রাজধানীর সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১ হাজার ১৩০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৯৯ দশমিক ৯১ শতাংশ পাস করেছেন, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪২৩ জন। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই আশানুরূপ ফল সম্ভব হয়েছে।’ নটর ডেম কলেজ থেকে ৩ হাজার ২৫১ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৯৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৪৫৪ জন। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২ হাজার ৪৯৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৯৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
রাজধানীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৩ হাজার ১৮৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩ হাজার ১৮২ জন পাস করেছেন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২০ জন। সাফল্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘নিয়মিত পাঠদান ও তদারকি, শিক্ষকম লীর আন্তরিকতা ও শিক্ষার্থীদের গভীর অধ্যবসায়ের সমন্বয়েই এ সাফল্য।’
আর আলিম পরীক্ষার ফলাফলে মাদরাসা বোর্ডে শীর্ষস্থানে রয়েছে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা। প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ২৭২ জন ফলপ্রার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ১ হাজার ২৬০ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ২১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৬১ জন।