৪৪ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (চাকসু) নেতৃত্বে ফিরেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটি সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল ভিপি-জিএসসহ ২৬ পদের ২৪টিতেই বিজয়ী হয়েছে। সহসভাপতি (ভিপি) পদে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম হোসেন রনি ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে একই বিভাগের সাঈদ বিন হাবিব পেয়েছেন ৮ হাজার ৩১ ভোট। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন গতকাল ভোর ৫টায় মৌখিকভাবে এ ফল ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. শাওন পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৩৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজাহারুল ইসলাম বিপ্লব পেয়েছেন ৪ হাজার ২৫৩ ভোট। সহখেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে তামান্না মাহবুব প্রীতি ৪ হাজার ৯২৯ ভোটে জয়ী হয়েছেন। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হারেজুল ইসলাম ৫ হাজার ৩২২ ভোটে জয়ী হয়েছেন। সহসাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক পদে জিহাদ হোসাইন জিহাদ পেয়েছেন ৬ হাজার ৭৮১ ভোট। দপ্তর সম্পাদক পদে মাত্র কয়েক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন আবদুল্লাহ আল নোমান (৩ হাজার ২৫৮ ভোট)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তাহসান হাবিব পেয়েছেন ৩ হাজার ২৩৬ ভোট। সহদপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল আদন নুসরাত মোট ৬ হাজার ৯৮২ ভোটে জয়ী হয়েছেন।
ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নাহিমা আক্তার দ্বীপা পেয়েছেন ৬ হাজার ১৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী সুমাইয়া সিকদার পেয়েছেন ৩ হাজার ৮২৬ ভোট। সহছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস রিতা মোট ৫ হাজার ৯৩৬ ভোটে জয়ী হয়েছেন।
বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে মাহবুবুর রহমান পেয়েছেন ৬ হাজার ১২৮ ভোট। গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক পদে ৫ হাজার ৬২২ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তানভীর আঞ্জুম শোভন। সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত তাহসিনা রহমান পেয়েছেন ৪ হাজার ২২৭ ভোট।
স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পদে আফনান হাসান ইমরান মোট ৫ হাজার ১১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে মোনায়েম শরীফ ৪ হাজার ৮৭৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ৪ হাজার ৯৮৭ ভোট পেয়ে মেহেদী হাসান সোহান জয়ী হয়েছেন।
যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক পদে মো. ইসহাক ভূঞা মোট ৫ হাজার ৬৬৩ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত ফজলে রাব্বি তৌহিদ পেয়েছেন ৭ হাজার ৩৭৬ ভোট।
পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে মাসুম বিল্লাহ ৬ হাজার ৫৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সহযোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক পদে ওবায়দুল সালমান জয়ী হয়েছেন।
এ ছাড়া চাকসুর পাঁচটি নির্বাহী সদস্য পদে বিজয়ীদের মধ্যে জান্নাতুল ফেরদাউস সানজিদা পেয়েছেন ৬ হাজার ১১৫ ভোট, আদনান শরীফ পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৮৯ ভোট, আকাশ দাশ পেয়েছেন ৪ হাজার ৪১৫ ভোট, সালমান ফারসী পেয়েছেন ৪ হাজার ৪১২ ভোট এবং সোহানুর রহমান পেয়েছেন মোট ৪ হাজার ৩১২ ভোট।
চাকসুর ২৬টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার ৫১৬ জন। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
চাকসুর ইতিহাসে ছাত্রশিবিরের সর্বশেষ জয় এসেছিল ১৯৮১ সালে। তখন ভিপি হন জসিম উদ্দিন সরকার আর জিএস হন আবদুল গাফফার। দুজনই ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন নেতা। এরপর দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা নেতৃত্বে ফিরলেন।
অনুভূতি জানিয়ে ভিপি ইব্রাহিম রনি বলেন, আমরা একটি স্বপ্নের ক্যাম্পাস বিনির্মান করতে চাই। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের শিক্ষার্থী ভাইবোনদের যারা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমরা তাদের কাছে গিয়ে তাদের কথা জানার চেষ্টা করেছি। তারাও আমাদের সম্মান করেছেন, ভালোবেসেছেন। তারা যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেটা আমাদের কাছে আমানত।
সাধারণ সম্পাদক সাইদ বিন হাবিব বলেন, শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই আমরা কাজ করে যাব। একটা স্বপ্নের সুন্দর ক্যাম্পাস বিনির্মাণে আমি কাজ করে যাব। বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি একাডেমিক ক্যাম্পাসে পরিণত করব।
এদিকে নির্বাচিতদের সার্বিক কাজে সহযোগিতা ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। গতকাল বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে শাখা ছাত্রদল আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিশ্রতি দেন তিনি।
পুনরায় গণনা চলছে দুটি হলের ফলাফল : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ও সোহরাওয়ার্দী হল সংসদের ফলাফল দ্বিতীয় দফায় গণনা চলছে। এ দুই হলে ভোট গ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সোহরাওয়ার্দী হলের ফল ঘোষণার সময় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে হট্টগোলের ঘটনা ঘটে এবং উপউপাচার্য মো. কামাল উদ্দিনকে রাতে আড়াই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।