নীল রং নিয়ে প্রকৃতিতে হাজির হয়েছে বর্ষাকাল। বর্ষার স্নিগ্ধ পরশে ডুবছে প্রকৃতি। বর্ষা প্রকৃতিকে সজীব করে তোলে, জীবনকে করে তোলে আনন্দমুখর। বর্ণিল এ উৎসবকে রঙিন করে তোলে বর্ষার শাড়ি।
শাড়ির ক্ষেত্রে সাবেকি কিংবা আধুনিক যাই হোক না কেন, বর্ষার ট্রেন্ড বুঝে পরা উচিত। রং-বাহারি শাড়ি বর্ষায় মন ভালো করে দিতে পারে সহজেই। এ জন্য রংটাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। তবে হালকা কোনো রঙে বর্ষা সাজালে চলবে না। গাঢ় নীলের আবেশে সাজাতে পারেন আপনার বর্ষার শাড়ি। বর্ণিল এ উৎসবকে আরও রঙিন করে তোলে বর্ষার শাড়ি।
বাঙালি নারীর পছন্দের ভূষণ শাড়ি। শাড়ি মানেই বাঙালি নারীর আভিজাত্যের সাজ। আর সেই শাড়ি যদি হয় বর্ষার আবহকে ঘিরে তাহলে তো কথাই নেই। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত চরণ দুটির মতোই, নীল রং নিয়ে প্রকৃতিতে হাজির হয়েছে বর্ষকাল। নীলাভ আভা বর্ষার শাড়িকে করেছে আরও বেশি প্রাণবন্ত। কাঠফাটা রোদ্দুরের দিন পেরিয়ে যখন বর্ষা এসে শীতল আবেশ দিয়ে যায় প্রকৃতিতে, সেই ভালো লাগাটা আসলেই প্রকাশ করা যায় না। প্রকৃতির নতুন সাজে মনও যেন সাজতে চায়। বাদলা দিনের আকাশ যতই মেঘে ঢাকা থাকুক না কেন, নীলাকাশকে তো ছাড়িয়ে যেতে পারে না। তেমনি বাঙালি নারীর বর্ষায় বৃষ্টিস্নাত আবহাওয়ায়ও নীল শাড়িতেই পূর্ণতা পায়। তাই ফ্যাশন হাউসগুলোরও ভাবনার কমতি নেই। প্রকৃতির এই নীল আভাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টাই করছেন স্বনামধন্য ফ্যাশন হাউসের ডিজাইনাররা। বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো তাদের বর্ষার আয়োজনে শাড়িতে নীল রংকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। সঙ্গে নীলাকাশের মতোই শুভ্র সাদার কম্বিনেশনেও সাজানো হয়েছে শাড়ির জমিন।
শাড়ি নিয়ে বাঙালি নারীদের বিস্তর ভাবনা। হাল ফ্যাশনে এর কদর সব কালের সব ঋতুতেই ছিল বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশ-এর প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাশ বলেন, ‘বাঙালি নারীর প্রথম চিরায়ত প্রেম শাড়ি, যার কোনো বিকল্প হয় না। আর এই শাড়িকে বর্ষার মেঘে ঢাকা নীলাভ আবহ করে তুলেছে আরও রঙিন। তাই তো বর্ষার শাড়িতে নীল রংকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। নীলের সঙ্গে কম্বিনেশন করা হয়েছে সাদা রঙের। ডিজাইনে থাকছে বৈচিত্র্য। ঘরোয়া পার্টি কিংবা অনুষ্ঠান যাই হোক, শাড়িই তো আদর্শ। ’
বিভিন্ন ধরনের শাড়ি শোভা পাচ্ছে ফ্যাশন হাউসগুলোতে। বর্ষার সময়টাতে ক্রেতারা জর্জেট কাপড়ের শাড়িই বেশি কিনে থাকেন। কারণ, বৃষ্টিতে ভিজলে জর্জেট কাপড় তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় এবং কাপড়ে কোনো ধরনের দাগ থাকে না, যেটা অন্য শাড়িতে থাকতে পারে। জর্জেটের শাড়িতে ছিটে দাগও পড়ে না (তিলা বা ছিতি হিসেবে পরিচিত), তাই বৃষ্টির দিনে এমন শাড়ির সুবিধা বেশি। এর বাইরেও সুতি, কোটা, এন্ডি সিল্ক এবং মসলিন শাড়িও চলছে বেশ জমিয়ে। কারণ আবহাওয়াগত একটা ব্যাপার রয়েছে। যেহেতু বৃষ্টিভেজা আবহাওয়া, অন্যদিকে গরমের মাত্রাটাও বেশি। এক্ষেত্রে সুতির শাড়িও আদর্শ। সুতি শাড়ি একদম নরম, ভিজলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় এবং পরতেও আরাম। আবার রেশমি, অর্থাৎ সিল্কের শাড়িও বৃষ্টির দিনে আরামদায়ক।
বর্ষার শাড়িতে খুব বেশি গর্জিয়াস ডিজাইনও নেই। কারণ এই গরমে জমকালো ডিজাইন কখনই শোভনীয় নয়। যে কারণে হাল্কা ডিজাইনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেহেতু বর্ষাকাল, তাই শাড়িগুলোকেও সাজানো হয়েছে বর্ষার গান, কবিতা, ছড়া ইত্যাদি দিয়ে। এসব কবিতা নিয়েও ডিজাইন করা হয়েছে শাড়ির জমিনগুলো। শুধু আঁচল এবং পাড়ের ডিজাইন ছাড়া অলওভার কাজগুলো এভোয়েট করা হয়েছে। তা ছাড়া বর্ষার চিত্রকর্ম নিয়েও বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। আর রঙের ক্ষেত্রে নীল রংকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নীল রঙের সঙ্গে বর্ষার মাধুরী দারুণভাবে মানিয়ে যায়। এ কারণে বেশির ভাগ শাড়িতে নীলের ছোঁয়া রাখা হয়েছে। নীলের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি কম্বিনেশন করা হয়েছে সাদা রঙের। সাদা শাড়ির ওপর বেজ করে নীল এবং পিংক কালারের ফুলের ডিজাইন বর্ষার চমৎকার আবহ ফুটিয়ে তুলেছে। ডিজাইন ব্যবহার করা হয়েছে হ্যান্ড পেইন্ট, স্প্রে, ব্লক, টাইডাই, পুঁতি, ক্রিস্টাল এবং মেটাল দিয়ে। মেটাল এবং ক্রিস্টাল দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বর্ষার আবহ। জর্জেট কাপড়ের ওপর স্টোন বেজ কাজের কিছু ভিন্ন ডিজাইনও দেখা যাচ্ছে শাড়িতে। বর্ষার ভেজা হাওয়ায় কেমন পোশাক মানাবে তা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় ডিজাইনারদের।
রাজধানীর যে কোনো শাড়ির দোকানে পাওয়া যাচ্ছে সহজপ্রাপ্য নানা রং, নানা ঢংয়ের শাড়ি। দামও হাতের নাগালে।
► বর্ষায় জর্জেট শাড়ির সঙ্গে সুতি প্রিন্টের ব্লাউজ পরা যায়। হাফ হাতা কিংবা হাতা কাটা ব্লাউজের নকশাটি ফুলেল মোটিফের হলে চলতি ঋতুর সঙ্গে ভালো মানাবে।
► বর্ষায় গাঢ় রং বেশি মানানসই। এমন বৈরী আবহাওয়ায় হালকা রং বেমানান। হালকা রঙের পোশাকে কাদা বা পানির ঝাপটা বোঝা যায়, যা গাঢ় রঙের ক্ষেত্রে এড়ানো যাবে।
► শাড়ি যেন বেশি নিচু না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। কুঁচি ভালোভাবে গুঁজে পিন দিয়ে আটকে নিন, আঁচলও ভাঁজ করে নিন। এতে বৃষ্টিতে শাড়ি সামলাতে বেগ পেতে হবে না।
► হিল ছাড়া শাড়ি বেশ বেমানান। তবে এই মৌসুমে উঁচু জুতা মোটেও উপযোগী নয়। একদম নিচু স্যান্ডেল না পরে চাইলে প্লাটফর্ম হিল বেছে নেওয়া যেতে পারে।