ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে ইলন মাস্কের স্থলাভিষিক্ত খুঁজছে প্রতিষ্ঠানটি- এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে। তবে এই খবরকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন টেসলার চেয়ারম্যান রবিন ডেনহোম। খবর রয়টার্সের
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, শেয়ারমূল্যের ধস এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের প্রেক্ষাপটে টেসলা নতুন সিইও খুঁজতে কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, টেসলার পরিচালনা পর্ষদ ইতোমধ্যে নতুন সিইও খুঁজতে একাধিক ‘নির্বাহী অনুসন্ধান’ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
তবে এ খবরের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইলন মাস্ক। তিনি এক পোস্টে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর প্রতিবেদনকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “টেসলার পরিচালনা পর্ষদের সাফ অস্বীকৃতি থাকা সত্ত্বেও এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করা নৈতিকতার গুরুতর লঙ্ঘন।” আরেকটি পোস্টে মাস্ক বলেন, “WSJ সাংবাদিকতার জন্য অপমানজনক।”
বৃহস্পতিবার (১ মে) টেসলার চেয়ারম্যান রবিন ডেনহোম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া বিবৃতিতে ওই প্রতিবেদনের সত্যতা নাকচ করে বলেছেন, “টেসলার সিইও ইলন মাস্কই এবং বোর্ড তাঁর নেতৃত্বে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সম্পূর্ণ আস্থা রাখছে।”
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল যদিও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশের কিছুক্ষণ পর হালনাগাদ করে জানায় যে প্রকাশের আগে টেসলা কোনো বিবৃতি দেয়নি।
উল্লেখ্য যে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে যে, টেসলার বোর্ড যথেষ্ট স্বতন্ত্র নয় এবং ইলন মাস্ককে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে টেসলা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। মাস্ক নতুন সাশ্রয়ী মূল্যের ইভি (ইলেকট্রিক ভেহিকল) তৈরির প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গিয়ে এখন স্বচালিত ট্যাক্সি ও হিউম্যানয়েড রোবট তৈরির দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে এখন একটি গাড়ি কোম্পানির বদলে এআই এবং রোবটিকস কোম্পানি হিসেবে নতুন করে ভাবা হচ্ছে।
তবে, মাস্কের রাজনৈতিক অবস্থান বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ডানপন্থী রাজনীতিকে সমর্থন এবং ট্রাম্প প্রশাসনে সরকারি চাকরি কমানোর কাজে সম্পৃক্ততার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে টেসলার গাড়ি বিক্রিতে বড় ধরনের পতন দেখা যাচ্ছে। এর প্রভাবে শেয়ারমূল্যও ধস নেমেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, টেসলার বোর্ডের (নির্বাহী পর্ষদ) সদস্যরা মাস্কের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং তাকে অনুরোধ করেছেন যে তিনি যেন প্রকাশ্যে টেসলায় আরও বেশি সময় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। মাস্ক সম্প্রতি জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনে তার কাজ কমিয়ে টেসলায় বেশি সময় দেবেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে টেসলার বিক্রি ও আয়ে বড় ধরনের পতন লক্ষ্য করা গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমদানিতে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাব এবং মাস্কের টেসলায় কম সময় দেওয়া- যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
মাস্ক সম্প্রতি বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছেন, তিনি টেসলায় আরও বেশি সময় ব্যয় করবেন এবং অন্যান্য প্রকল্প থেকে কিছুটা সরে আসবেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মাস্ক টেসলার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন এবং এটি তার অনেক ব্যবসার অন্যতম প্রধান প্রকল্প।
বিডি প্রতিদিন/আশিক