তিন-চারশ বছর আগে ময়মনসিংহ শহর ও তার আশপাশে বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক জমিদার পরিবার বাস করত। তার ছাপ এখনো বিদ্যমান। এ শহরে শিক্ষার জন্য রয়েছে অসংখ্য খ্যাতনামা স্কুল, কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে একটি জনপদকে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে উন্নত করার প্রধান সূতিকাগার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তি ইউনিটের অধীনে এই শহরে রয়েছে ময়মনসিংহ সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টি। ১১ অক্টোবর এখানে অনুষ্ঠিত হয় জাঁকজমকপূর্ণ নবীনবরণ অনুষ্ঠান ও অভিভাবক সমাবেশ। কলেজ কর্তৃপক্ষকে নবাগত শিক্ষার্থীদের আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বরণ করতে দেখে সত্যিই প্রীতি অনুভব করেছি। নতুন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের উপস্থিতিতে হয়ে উঠল আনন্দঘন মিলনমেলা। এ প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর তিন বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হন। বিষয়গুলো হলো- ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই), কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিই)। প্রতিটি বিভাগে ৬০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে পুরোনো বিভাগ হচ্ছে ইইই বিভাগ। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, ইইই বিভাগ থেকে এ পর্যন্ত ৫০০ শিক্ষার্থী উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাদের মধ্যে ১০০’রও বেশি শিক্ষার্থী ইউরোপের বিভিন্ন খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পেয়ে অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করেছেন। শিক্ষার্থীরা নতুন ক্যাম্পাসে এসে একে অপরের সঙ্গে পরিচয় পর্বে মেতে ওঠেন। তুলনামূলক ছোট পরিসর হলেও একাডেমিক ভবন, বিভাগ ভবন, লাইব্রেরি ভবন, ছেলেমেয়েদের আলাদা আলাদা হোস্টেলের ডিজাইন ও বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন নান্দনিকতার পরিচয় বহন করে। ক্যাম্পাসের অপর পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা আবাসন ব্যবস্থা। ক্যাম্পাসজুড়ে সবুজের সমারোহ। আছে নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ। সন্তানের সঙ্গে এসে কোলাহলমুক্ত সবুজময় ক্যাম্পাস দেখে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হলো। সেদিন অনেকের সঙ্গে পরিচয় হলো। আলাপচারিতার একপর্যায়ে মনে হলো, আমরা যেন চিরচেনা! সে এক অন্যরকম অনুভূতি। অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদকর্মী পরিচয়ে নবীনবরণের মঞ্চে কথা বলার পর পরবর্তী ঘণ্টা দুয়েক নাম না জানা অসংখ্য অভিভাবকের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার কথা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই আড্ডার মধ্য দিয়েই মনে পড়ল ৩০ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুখস্মৃতি। নবীনবরণ অনুষ্ঠানের পর প্রতিষ্ঠান প্রধান অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান অভিভাবকদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক ও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি অভিভাবকদের কথা শোনেন এবং প্রতিটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। শেষে যে কথা বলতে হয়, চট্টগ্রাম থেকে এই প্রথম আমার ময়মনসিংহ যাত্রা ছিল সুখস্মৃতিতে পূর্ণ।
লেখক : ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিক্ষার্থীর অভিভাবক