ঢাকাস্থ স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট হলি আর্টিসান বেকারিতে গত শুক্রবারের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের মধ্যে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তিন তরুণ, সম্ভাবনাময়ী ও মেধাবী ফারাজ আইয়াজ হোসেন [২০], অবিনতা কবির [২০] ও ভারতীয় নাগরিক তারিশি জৈন। এর মধ্যে ফারাজ বাংলাদেশি নাগরিক ও অবিনতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মিয়ামির বাসিন্দা ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার আগে তারিশি ও অবিনতা দু'জনেই ঢাকার আমেরিকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। মেধাবী ও উদীয়মান এ তিন শিক্ষার্থীকে হারিয়ে শোকাহত যুক্তরাষ্ট্রস্থ তাদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসের সহপাঠী ও কর্তৃপক্ষ। এমনকি ফ্লোরিডার গভর্নর রিক স্কট অবিনতার স্মরণে আজ রবিবার রাজ্যজুড়ে মার্কিন ও ফ্লোরিডা স্টেটের পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে সহাপাঠীরা তাদের নিয়ে স্মৃতিচারণও করেছেন। সহাপাঠীদের চোখে ফারাজ, অবিনতা ও তারিশি কেমন মানুষ ছিলেন তা-ই সিএনএন'র সূত্রে নিচে তুলে ধরা হলো :
'প্রচণ্ডরকম উদার ছিলেন অবিনতা কবির'
আটলান্টাভিত্তিক এমরি ইউনিভার্সিটির জর্জিয়াস্থ অক্সফোর্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন অবিনতা। তার মৃত্যুতে শোকাহত তার বেশ কয়েকজন সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমা লুইজা জ্যাকবি নামে তার শৈশবকালের এক বন্ধুর চোখে অবিনতা ছিলেন সারা বিশ্বের সম্পদ। জ্যাকবির ভাষায়, 'তার কাজের নীতি ছিল আমার কাছে সবসময় উৎসাহব্যঞ্জক। সে অবিশ্বাস্যভাবে লক্ষ্যমুখী ছিল এবং নিজের কাজ ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে ছিল সম্পূর্ণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। উপরন্তু সে ছিল একজন চমৎকার ক্রীড়াবিদ।' অবিনতা প্রচণ্ডরকম উদার ছিলেন বলে রুশাই আমারাথ মাদব নামে তার এক কলেজ সহপাঠী জানান। উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ঢাকায় এসেছিল অবিনতা।
'বেশ বিনয়ী ছিল ফারাজ হোসেন'
অবিনতার মতো ফারাজ আইয়াজ হোসেনও এমরি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিল। সে এমরির জর্জিয়াস্থ অক্সফোর্ড কলেজের ২০১৬ সালের একজন গ্র্যাজুয়েট ও গুয়াজুয়েতা বিজনেস স্কুলের একজন শিক্ষার্থী ছিল। বন্ধু ও সহাপাঠীদের চোখে সে বেশ বিনয়ী ও দায়িত্বশীল ছিল। তার হাইস্কুলের এক বন্ধু সিএনএনকে বলেন, ফারাজ ভোটে 'প্রম কিং' নির্বাচিত হয়েছিল ও ক্লাস প্রেসিডেন্ট ছিল। ওই বন্ধুর চোখে সে ছিল বেশ বিনয়ী ও তার সাক্ষাৎ ঘটা মানুষগুলোর মধ্যে অধিকতর দায়িত্বশীল ছেলে। রিফাত মুরসালিন নামে আরেক বাংলাদেশি সহপাঠী ও বন্ধু জানান, স্কুলের একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে ফারাজের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। তার ভাষায় ফারাজ ছিলেন এককথায় খুবই যত্মশীল, সহায়কপ্রবণ ও চরমমাত্রায় বর্হিমুখী। এ ঘটনায় তারা বেশ স্মম্ভিত ও শোকাহত বলেও জানান।
'বেশ স্মার্ট ছিল তারিশি জৈন'
ভারতীয় নাগরিক তারিশি জৈন বেশ স্মার্ট ও উচ্চাকাঙ্খী ছিল বলে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের পরিচালক সঞ্চিতা সাকসেনা বলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেয়ার আগে তারিশিও ঢাকাস্থ আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়াশোনা করেন। জুনের প্রথম দিক থেকে সে ঢাকাস্থ ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের এক শাখায় ইন্টার্নশিপ শুরু করেছিল। তার বাবা সঞ্জীব জৈন গত ২০ বছর ধরে বাংলাদেশে গার্মেন্ট ব্যবসায় জড়িত। সে সূত্রে তার প্রায়ই ঢাকায় আসা হতো। তাদের জন্মস্থান ভারতের উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদে। সূত্র : সিএনএন'র
বিডি-প্রতিদিন/৩ জুলাই ২০১৬/শরীফ