তুরস্কে ঐতিহাসিক গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ। নতুন সংবিধান অনুমোদিত হবে কি না, এ বিষয়ে গণভোটে নিজেদের মতামত জানাবেন তুর্কিরা। এতে ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে বেশি ভোট পড়লে অনুমোদন পেয়ে যাবে নতুন সংবিধান। আর ‘না’ এর পক্ষে ভোট বেশি থাকলে বহাল থাকবে বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থাই।
সংবিধানে প্রস্তাবিত সংশোধনী আনা হলে তুরস্কের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। দেশটিতে চালু হবে পূর্ণ রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকার ব্যবস্থা। এতে সবনির্বাহী ক্ষমতার মালিক হবেন প্রেসিডেন্ট। থাকবে না প্রধানমন্ত্রীর কোনো পদ। গণভোটকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে দেশটিতে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চলেছে। যারা ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে তাদের মতে, তুরস্ককে আরও স্থিতিশীল এবং নিরাপদ করতেই সংবিধানের প্রস্তাবিত পরিবর্তন দরকার। অন্যদিকে বিরোধীরা মনে করছেন, সংবিধানের প্রস্তাবিত সংশোধনী তুরস্ককে একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ে যাবে। এতে দেশটির গণতান্ত্রিক ভাবধারা ক্ষুণ্ন হবে বলেও মত তাদের। প্রসঙ্গত, সংবিধান সংশোধন হলে ২০২৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান।
তুরস্কের সংবিধানের সংশোধনের পক্ষে রয়েছে এরদোয়ানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) এবং কট্টর ডানপন্থি দল ন্যাশনালিস্ট অ্যাকশন পার্টি (এমএইচপি)। গণভোট আয়োজনে সংসদে একেপিকে প্রয়োজনীয় সমর্থন দিয়েছে এমএইচপি। কিন্তু সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী চারটি দলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট দল এমএইচপি। কার্যত তাই ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে একেপিকে একাই কাজ করতে হয়েছে ।
এ ব্যাপারে কয়েকদিন আগে ইস্তাম্বুলে লাখো মানুষের এক সমাবেশে এরদোয়ান বলেন, ‘এই গণভোট প্রয়োজনীয়, যাতে মাত্র ১৫ শতাংশ ভোট পেয়ে যাতে আর কেউ তুরস্কের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসতে না পারে। তবে বিরোধীরা বলছেন, এই গণভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছেন এরদোয়ান। দলটির এক কর্মী এমরাহ পোলাত বলেন, ‘অদেখা কোনো ক্ষমতা আর উন্নয়নের দিবাস্বপ্ন দেখাচ্ছে এরদোয়ান সরকার।’ এরদোয়ানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে তিনি তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা নিঃশেষ করে দেবেন বলেও অভিযোগ তাদের।
উল্লেখ্য, তুরস্ক সামরিক জোট ন্যাটোর অন্যতম বৃহত্তম সদস্য। ইউরোপ এবং এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতেও এই দেশটির গুরুত্ব অনেক। বিশেষ করে সিরিয়া ও ইরাকের পরিস্থিতি এবং ইউরোপের অভিবাসী সংকট মোকাবিলাসহ নানা কারণে সাম্প্রতিক সময়ে এই গুরুত্ব আরও বেড়েছে।