ওয়াশিংটনে বন্দুক হাতে নিজের স্কুলে হামলা চালাল এক কিশোর। তাকে বাধা দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে স্কুলের এক পড়ুয়া। গুলিবিদ্ধ হয়ে জখম আরও তিন ছাত্রী। স্যাক্রেড হার্ট হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের স্পোক্যান কাউন্টির ফ্রিম্যান হাইস্কুলের ঘটনা এটি।
বন্দুকবাজ সেই কিশোরকে ক্যালেব শার্প বলে শণাক্ত করা গেছে। বয়স ১৫ বছর। হামলা চালানোর সময় ইউটিউব অ্যাকাউন্টে নিজেকে রেকর্ড করছিল সে। এমনিতে প্রায়শই সোশ্যাল মিডিয়ায় নাশকতার ছবি পোস্ট করত সে। স্কুলে বন্দুকবাজ হামলা সংক্রান্ত তথ্যচিত্র দেখার অভ্যাসও ছিল। তাকে গ্রেফতার করে ওয়াশিংটন জুভেনাইল জেলে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ বন্দুক হাতে স্কুলে ঢুকে পড়ে ক্যালেব। সামনের ঘরে তখন জীববিদ্যার ক্লাস চলছিল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথম গুলিটি ছোঁড়ে সে। একটি গুলি ছোঁড়ার পরই বন্দুকটি বিকল হয়ে যায়। সেই সময় তাকে বাধা দিতে এগিয়ে আসে স্যাম স্ত্রাহান নামে তার এক সহপাঠী। কিন্তু ততক্ষণে দ্বিতীয় বন্দুক বের করে ফেলেছে সে। সরাসরি স্যামের মাথায় গুলি করে।
তারপরই চম্পট দেওয়াল তাল খুঁজতে শুরু করে সে। গুলি চালাতে চালাতে স্কুলের হলঘরে যাওয়ার পথে এসে পৌঁছয়। সেখানে ৩ ছাত্রীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। শেষপর্যন্ত স্কুলের এক কর্মী ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে নিরস্ত করে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। রকফোর্ডের জুভেনাইল জেলে রাখা হয়েছে তাকে।
হামলার পর স্পোক্যানের শেরিফ ওজি নেজোভিচ একটি বিবৃতি জারি করে বলেন, ‘সকাল ১০টায় সবে পঠনপাঠন শুরু হয়েছিল। তখনই গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে স্কুল চত্বর। আতঙ্কে স্কুল ছেড়ে পালাতে শুরু করে বাকি পড়ুয়ারা। স্থানীয় ফ্রিম্যান প্রাথমিক স্কুলে নিরাপদ আশ্রয় নেয়। ক্লাসরুমে বেঞ্চের নীচে আশ্রয় নেয় অনেকে। স্কুলে সহপাঠীদের নিগ্রহের শিকার হয়েছিল হামলাকারী ওই ছাত্র। প্রতিশোধ নিতেই এসেছিল বোধহয়।’
তবে নিগ্রহের অভিযোগ মানতে নারাজ ক্যালেবের অন্যান্য সহপাঠীরা। ১৫ বছর বয়সী মাইকেল হার্পার জানিয়েছে, ‘ক্যালেব কখনও নিগৃহীত হয়নি। বরং সবসময় মজা করত। তবে নাশকতার প্রতি অদ্ভুত নেশা ছিল। স্কুলে বন্দুকবাজ হামলাসংক্রান্ত নানা ধরনের তথ্যচিত্র দেখত। সম্প্রতি সবাইকে বলে বেড়াচ্ছিল, খুব শিগগির অত্যন্ত খারপ কিছু করতে চলেছে সে। তাতে জেল অথবা মৃত্যুও হতে পারে। তারপর আজ সকালে ব্যাগের মধ্যে বন্দুক নিয়ে স্কুলে চড়াও হয় সে। একজনকে খুন করে। ওর এমন মূর্তি দেখে আমরা ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছিলাম। ঘরের এক কোণে জড়ো হয়ে বসেছিলাম। অনেকে ভয়ে কান্নাকাটি করছিল। চেষ্টা করছিল বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করার।’
আর এক ছাত্র জানিয়েছে, ‘হামলার সময় ওকে বন্ধু বলে ভাবতে পারছিলাম না। তখনই মাথায় আসে যে বেশ কিছু দিন ধরে স্কুলে হামলা সংক্রান্ত নানা তথ্যচিত্র দেখছিল ও। স্ন্যাপচ্যাটে আমাকে নাশকতার একটি ছবিও পাঠিয়েছিল। কিন্তু ওর এমন ভয়ঙ্কর কিছু করার ক্ষমতা নেই বলে উড়িয়ে দিয়েছিলাম আমি।’
ক্যালেব মোট চারটি গুলি চালায় বলে টুইটারে জানিয়েছে করেছে স্কুলের আর এক পড়ুয়া ক্রিস্টিনা। গুলির শব্দ পেয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে চেয়ারের পিছনে লুকিয়ে পড়েছিল সে। তার একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছে, ‘এখন ফ্রিম্যান প্রাথমিক স্কুলে রয়েছি। আমাকে উদ্ধার করা হয়েছে। চারবার গুলি চালানোর শব্দ শুনেছি।’
ক্যালেবকে হেপাজতে নেওয়ার পর ফ্রিম্যান হাইস্কুল চত্বরে তল্লাশি চালায় পুলিস। তবে সন্দেহজনক কিছু মেলেনি। তারা নিশ্চিত যে একাই হামলা চালিয়েছিল ওই পড়ুয়া। তবে নিরাপত্তার খাতিরে সেন্ট্রাল ভ্যালি স্কুল ডিস্ট্রিক্ট এবং মিড ডিস্ট্রিক্টের সমস্ত স্কুল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। রাস্তাঘাটে মোতায়েন হয় পুলিস বাহিনী। হামলার খবরে স্কুল চত্বরে ছুটে আসেন পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। তবে পুলিস তাঁদের স্কুলে ঢোকার অনুমতি দেয়নি। একে একে পড়ুয়াদের উদ্ধার করে তাদের পরিবারের লোকজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭/ তাফসীর