শনিবার শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হল গুজরাট বিধানসভার প্রথম দফার নির্বাচন। এই দফায় গুজরাট বিধানসভার ১৮২ আসনের মধ্যে ৮৯ আসনে ভোট নেওয়া হয়। এই দফায় নির্বাচনী কেন্দ্রগুলি ছিল কচ্চ, সৌরাষ্ট্র ও দক্ষিণ গুজরাটে।
সকাল ৮ টায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ পর্ব, কোনরকম বিরতি ছাড়াই তা শেষ হয় বিকেল ৫ টায়। ভোট পড়েছে ৬৮ শতাংশের কিছু বেশি।
এই দফায় মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ২,১২,৩১,৬৫২ জন। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৯৭৭ জন। এ দফায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল রাজকোট (পশ্চিম) আসনটি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি লড়াই করেছেন এই আসন থেকেই। তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন ইন্দ্রনীল রাজগুরু। এছাড়াও নজর ছিল মান্ডবী ও আমরেলি আসন দুইটির দিকেও। এই দুইট কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন কংগ্রেসের দুই অন্যতম নেতা শক্তিসিং গোহিল এবং পরেশ ধনানি।
নির্বাচনকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রতিটি কেন্দ্রেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন ছিল।
এদিন সকাল থেকেই ভোট কেন্দ্রগুলির বাইরে ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অনেক নতুন ভোটারও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এমনকি সদ্য বিয়ে করে আসা বর-কনেও বিয়ের পোশাকে ভোটের লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়। এদিন সকালেই স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে রাজকোটে নিজের কেন্দ্রে ভোট দেন রূপানি, বিজেপির রাজ্য সভাপতি জিতুভাই ভাগানি, কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ আহমেদ প্যাটেল, ক্রিকেটার চেতেশ্বর পুজারা সহ বিশিষ্টরা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী প্রতেক্যেই টুইট করে ভোটারদের ভোট দানে উৎসাহিত করেন।
গত ২২ বছর ধরে এই রাজ্যটিতে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। এবারও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে মরিয়া গেরুয়া দলটি। এদিন ভোট দিয়েই জেতার ব্যাপারে আশাপ্রকাশ করেছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। তিনি জানান রাজ্যের মানুষের উচিত বড় সংখ্যায় ভোটদানে যোগ দেওয়া। আমরা খুবই আশাবাদী, এখানে চ্যালেঞ্জের কোন প্রশ্নই নেই’।
তবে বিজেপির অন্দরমহলের কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এবারের লড়াইটা কিছুটা কঠিন ক্ষমতাসীন দলের কাছে। কারণ এই রাজ্যেরই ছেলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা কমেছে। তারণ কারণ হিসাবে রয়েছে নোট বাতিল, জিএসটি, গোরক্ষক সহ একাধিক ইস্যু। একইসঙ্গে পতিদার-ওবিসি,দলিত সম্প্রদায়ের মানুষরাও নানা কারণে কিছুটা ক্ষুব্ধ।
আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই নির্বাচনী ফায়দা ঘরে তুলতে চাইছে কংগ্রেস। এটা ঠিক যে অন্য বারের চেয়ে এবার অনেক বেশি শক্তি নিয়েই নির্বাচনী ময়দানে নেমেছে কংগ্রেস। তার ওপর কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা জানিয়েছে হার্দিক প্যাটেল, জিগনেশ মেবানি, অল্পেশ ঠাকুরদের মতো দলিত,পতিদার নেতারা। তারা জানিয়েছেন তাদের সম্প্রদায়ের সব লোজকনই কংগ্রেসকেই ভোট দেবেন। যদিও বাস্তবে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। তবে বিজেপির ভোটে যে এবার তারা কিছু থাবা ফেলবে তা পরিস্কার।
২০১৯ সালে দেশটির লোকসভা নির্বাচন। তার আগে দুই দলের কাছেই কার্যত এই নির্বাচনকেই সেমি-ফাইনাল বলে ধরা হচ্ছে। তার কারণ পশ্চিম ভারতের এই রাজ্যটিতে যদি বিজেপি পঞ্চমবারের জন্য ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে, সেক্ষেত্রে নিজের রাজ্য অক্ষুন্ন রেখেই ২০১৯ সালের প্রস্তুতি নিতে পারবেন অন্যদিকে কংগ্রেস যদি জেতে তবে বাড়তি অক্সিজেন, আত্মবিশ্বাস নিয়ে লোকসভা নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে।
গণমাধ্যমের কাছেও মোদির নিজের রাজ্যের এই নির্বাচন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। দেশীয় গণমাধ্যমের পাশাপাশি এএফপি’র মতো বিদেশি গণমাধ্যমগুলি বড় করে সংবাদ প্রকাশিত করছে এই বিধানসভার নির্বাচন।
আগামী ১৪ ডিসেম্বর রাজ্যের ৯৩ আসনে দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ হবে। গণনা আগামী ১৮ ডিসেম্বর।
বিডি প্রতিদিন/ ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৭/ ই জাহান