পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফের নেতৃত্বে ইরানের একটি উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি দল লেবানন সফরে গেছেন। সাদ হারিরির নেতৃত্বে লেবাননে নতুন মন্ত্রীসভা গঠিত হওয়ার পর জারিফের এটাই প্রথম লেবানন সফর। প্রায় নয় মাস ধরে ব্যাপক আলোচনার পর গত ৩১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরির নেতৃত্বে লেবাননে নতুন সরকার গঠিত হয়।
পশ্চিম এশিয়ার সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা ইসলামি ইরানের প্রধান নীতি। এরই আলোকে যেকোনো পরিস্থিতিতে লেবাননের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করা ও দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এ অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লেবানন সরকার এবং দেশটির হিজবুল্লাহর মতো প্রতিরোধ সংগঠন দখলদার ইসরায়েলের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অঞ্চলে ইরান ও লেবাননের অভিন্ন শত্রু রয়েছে।
ইরানের স্ট্র্যাটেজিক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের প্রধান কামাল খাররাজি লেবাননের হিজবুল্লাহর প্রতি ইরানের সমর্থনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ইরানের এ সমর্থন বজায় থাকবে কারণ একমাত্র যুদ্ধ ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই ইসরাইলকে লেবানন থেকে পুরোপুরি বিতাড়িত করা সম্ভব।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দখলদার ইসরায়েল ও উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো শুধুমাত্র লেবানন ও সিরিয়ার জন্যই নয় একই সঙ্গে পশ্চিম এশিয়াসহ সমগ্র বিশ্বের জন্য হুমকি। ইসরায়েলের ২০০টি পরমাণু ওয়ারহেড এ অঞ্চলের সব দেশের জন্যই বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় এ অঞ্চলের ইসলামি প্রতিরোধ সংগঠনগুলো বর্তমানে ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লেবাননের জনগণ প্রমাণ করেছে যে কোনো পরিস্থিতিতে তারা দেশের ভেতরের নানা সংকট নিরসন কিংবা ইসরায়েলের হুমকি মোকাবেলায় সক্ষম এবং সব দল ও সংগঠনকে নিয়ে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
লেবাননের রাজনৈতিক নেতারা জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার জন্য যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা দেশটির ভবিষ্যতের জন্য খুবই জরুরি। ইরানের দৃষ্টিতে লেবাননের এই নেতাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর লেবানন সফরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
লেবানন বিষয়ক বিশ্লেষক তালাল আত্রিসি বলেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ইরান আমেরিকার জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে শক্তিমান ও সফল ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু নানা ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পর এখন ইরান ও হিজবুল্লাহকে হুমকি হিসেবে দেখছেন ট্রাম্প।
এই বাস্তবতার আলোকে বলা যায়, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর লেবানন সফরের বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। প্রযুক্তি ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে ইরানের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে তা দিয়ে লেবাননসহ এ অঞ্চলের যেকোনো দেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তেহরান। তাই জারিফের লেবানন সফরের মধ্য দিয়ে আর্থ-রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু'দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে উঠবে বলে ব্যাপকভাবে আশা করা হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/আরাফাত