ভারতের উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে দুই কাশ্মীরি ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ উঠল ডানপন্থীদের বিরুদ্ধে। বুধবার বিকাল ৫টার দিকে মধ্য লখনউয়ের ডালিগঞ্জ এলাকায় রাস্তার পাশেই শুকনো ফল বিক্রির জন্য বসেছিলেন ওই দুই যুবক। এসময়ই আচমকাই গেরুয়া পোশাক ধারী দুই-তিন জন যুবক তাদের ওপর চড়াও হয়। এরমধ্যে এক যুবক ওই মারধরের ছবি মোবাইলে ধারণ করেন। একটি ভিডিওটিতে দেখা যায় এক যুবক লাঠি দিয়ে এক কাশ্মীরি ফল বিক্রেতাকে মারধর করছেন, আরেকজন তাকে চড় মারছেন এবং পোশাক ধরে টানা-হিঁচড়ে করছেন। এসময় ওই কাশ্মীরি হামলাকারীদের মারধর না করতে নিষেধ করেন। কিন্তু অনুরোধে কাজ না হওয়ায় নিজের প্রাণ বাঁচাতে তার জিনিসপত্র ফেলে দিয়েই দৌড় মারেন।
মারধরের সময়ই ওই স্থানে অনেকেই দর্শকের মতো আচরণ করলেও কয়েকজন মানুষ ওই কাশ্মীরিদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন। কাশ্মীরিদের কেন মারধর করা হচ্ছে তা জানতে চাওয়া হলেও অভিযুক্ত এক যুবককে বলতো শোনা যায় কাশ্মীরি হওয়ার কারণেই তার ওপর এই ধরনের আচরণ করা হচ্ছে। ওই কাশ্মীরিদের ভারতীয় পরিচয়পত্র আছে কি না তাও জানতে চাওয়া হয়।
গত কয়েকবছর ধরেই ওই এলাকায় শুকনো ফল বিক্রি করে আসছে কাশ্মীরিরা। প্রধান অভিযুক্ত নিজেকে বিশ্ব হিন্দু দল নামে একটি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দাবি করেছেন।
ঘটনা সামনে আসতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর-ও দায়ের করা হয়েছে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত বজরং সোনকার বলে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে অভিযান চলছে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পরই পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরাখন্ড, পাটনা, বেঙ্গালুরুসহ দেশজুড়ে কাশ্মীরি নাগরিকদের ওপর হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও কাশ্মীরিদের বর্জন করার দাবি ওঠে। এমনকি মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় কাশ্মীরিদের সবকিছুই বর্জনের দাবি তুলে টুইট করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটির সুপ্রিম কোর্টও হস্তক্ষেপ করে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে শীর্ষ আদালত বাধ্য হয়ে কেন্দ্র ও একাধিক রাজ্য সরকারকে কাশ্মীরিদের নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এমন এক প্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও স্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলেন ‘কাশ্মীরিদের ওপর হামলা কোনমতেই বরদাস্ত করা হবে না।’ কিন্তু তার পরেও এই ধরনের ঘটনা থেমে থামার কোন লক্ষণ নেই।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা