বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর, এ রাজ্য থেকে গরুপাচারের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, ফলে গবাদি পশু পাচার রুখতে এবার পদক্ষেপ করল বিএসএফ। দুই বাংলার সীমান্তে গরু পাচার রুখতে সীমান্ত বেশী জওয়ান মোতায়েন করার পাশাপাশি জলপথে অতিরিক্ত বোট নামানোসহ নানান পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ভারতের সংবাদমাধ্যমে এনডিটিভি এ খবর প্রকাশ করেছে।
বিএসএফের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, সীমান্ত বরাবর জলপথে কয়েকশো গরু পাচার হচ্ছে। আমরা অনেক গরু আটকেছি, যেগুলির গলায় কলা গাছ বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে বাংলাদেশ সীমান্তের পাচারাকীররা সহজেই সেগুলো নিয়ে নিতে পারে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ১,২০০ গরু এবং মোষ আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসএফ কর্মকর্তারা। প্রতিটি গরু এবং মোষের দাম ৮০,০০০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৪ হাজার টাকায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
বিএসএফ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে পরিমাণ গরু পাচার হয়, তার এক তৃতীয়াংশ গবাদি পশু আটক করা গিয়েছে। সেই কারণেই সীমান্ত অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন, মোটর বোটের সংখ্যা বাড়ানো এবং গরু পাচার রুখতে এবং নজরদারিতে জোর দেওয়া হয়েছে বাহিনীর তরফে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গরু পাচারের এই বাড়াবাড়ন্তে সীমান্তে পাচারকারীদের সঙ্গে বিএসএফ জওয়ানদের প্রায়ই সংঘর্ষ হয়।
গত কয়েক সপ্তাহে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ১২ জন বিএসএফ জওয়ান পাচারকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন।
বাহিনীর দক্ষিণবঙ্গের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেনাদের আগ্রাসিভাবে থাকতে বলা হয়েছে, এবং যাতে গরু পাচারের সংখ্যা কমানো যায়, সেদিকে নজর দিতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনায় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে পাচারের ওপর নজরদারির জন্য বাহিনীর জওয়ানদের অ্যাডিশনাল থার্মাল ইমেজার পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক।
পশ্চিমবঙ্গের ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্ত, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারে বিভক্ত। সর্বমোট ৪,০৯৬ কিলোমিটারের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের রয়েছে ৯১৫ কিলোমিটার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিদিন রাতে পাহাঘাটি, ফুলতলা, লালপুর, ধানগ্রা, ধুলিয়ান, ছোটোশিবপুর, বড়শিবপুর, ডিস্কোমোকর, দৌলতপুরের মতো গঙ্গার তীরবর্তী গ্রাম থেকে অনেকগুলিতে গরুকে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ ও বিএসএফের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এই জলপথে গরু পাচার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সীমান্তের অন্যান্য অপরাধ থেকে বিএসএফের এখন প্রধান নজরদারি পৌঁছেছে গরু পাচারে।
সীমান্তে নজরদারিতে সহায়তার জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজির সঙ্গে দেখা করেছেন বিএসএফের কম্যান্ডার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার কথায়, এই অপরাধ রোখার একমাত্র রাস্তা, বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর গরু বোঝাই ট্রাকগুলিকে আটকানো। এইগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশকেও। বহু বছর ধরে যে সমস্ত পাচারকারী গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধেও ভারতের তরফে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা