জাতিসংঘের পরমাণু বিষয়ক নজরদারি সংস্থা আইএইএ'র নির্বাহী পরিষদে ইরান-বিরোধী এক প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। আজ (শুক্রবার) এ প্রস্তাব পাস করা হয়। ইরান তার দু'টি পরমাণু স্থাপনায় আইএইএ'র পরিদর্শকদের ঢুকতে দিচ্ছে না বলে এই সংস্থার রিপোর্টের প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবটি পাস করা হল। প্রস্তাবটি তুলেছে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইরান যেন কোনো দেরি না করেই আইএইএ'র পরিদর্শকদেরকে ওই দু'টি পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ দেয়।
ইরান বলেছে ইহুদিবাদী ইসরাইলের একটি বানোয়াট অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে সন্দেহাতীত বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। আইএইএ-তে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজেম গরিবাবাদি বলেছেন, শত্রুর দাবির মুখে কোন দেশ নিজের সীমান্ত বা ভূখণ্ড পরিদর্শকদের জন্য খুলে দেয় না। আর ইসরাইলের এই অভিযোগ যে মিথ্যা তা তদন্ত করলেই স্পষ্ট হবে বলে তিনি জানান।
ইহুদিবাদী ইসরাইল বলে আসছে, ইরানের এ দুটি স্থাপনা পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইসরাইলের এই অভিযোগের ভিত্তিতে পরমাণু বিষয়ক নজরদারি সংস্থা আইএইএ ইরানের ওই দুটি পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায় কিন্তু ইরান তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।
ইরান পরমাণু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সমঝোতায় স্বাক্ষর করে এ সমঝোতায় বর্ণিত সব দায়িত্ব পালন ও এমনকি বাড়তি অনেক ছাড় দিয়ে আসা সত্ত্বেও ওই সমঝোতায় ইরানকে যেসব সুবিধা দেয়া হবে বলে কথা ছিল তার প্রায় ৯৫ শতাংশই তেহরানকে দেয়া হয়নি, বরং চুক্তির কালি না শুকাতেই মার্কিন সরকার ইরানের ওপর নানা অজুহাতে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে।
এক পর্যায়ে এ সমঝোতা থেকে বেরিয়ে এসে ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকার ইরানের ওপর পুরনো সব নিষেধাজ্ঞা আবারও চালু করে এবং নতুন নতুন অজস্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে। এ সমঝোতার শরিক ইউরোপীয় পক্ষগুলোও মার্কিন সরকারের এইসব হঠকারিতার মোকাবেলায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ফলে সমঝোতায় বর্ণিত কয়েকটি ধারার আলোকে অঙ্গীকার বাস্তবায়ন কমিয়ে আনে ইরান। কারণ ওই ধারাগুলোর আলোকে পরমাণু অঙ্গীকার বাস্তবায়ন স্থগিত রাখা বা কমিয়ে রাখা ইরানের অধিকার। আর এ বিষয়ে ইরান বিরোধী কোনো প্রস্তাব পাশের আগে প্রস্তাবটির উত্থাপকদের ভেবে দেখা উচিত কোনো সমঝোতা কখনও একতরফা হতে পারে না। অন্যের বেলায় শতভাগ সুবিধা আদায় করবে ও নিজের বেলায় প্রতিশ্রুত সুবিধার এক আনারও বেশি নিতে দেব না –এমন নীতির ভিত্তিতে কোনো সমঝোতা স্থায়ী হতে পারে না।
জাতিসংঘ ও এর অঙ্গ-সংগঠনগুলো সারা বিশ্বে সব ধরনের অশান্তির মূল হোতা পশ্চিমা শক্তিগুলো ও তাদের লাঠিয়াল-সদৃশ জারজ সন্তান বর্ণবাদী ইসরাইলের কথায় নাচতে গিয়ে যে কোনো মীমাংসিত বিষয়কে আবারও বিরোধপূর্ণ বিষয়ে রূপ দিতে অভ্যস্ত। আইএইএ-তে ইরান সম্পর্কিত আজকের প্রস্তাবটিও ঠিক এমনই এক ব্যাপার। রাশিয়া এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে এবং চীনও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে এর ফলে পরমাণু সমঝোতা বিপন্ন হতে পারে!
পরমাণু সমঝোতার ধারা অনুযায়ী আগামী অক্টোবর মাসে ইরানের ওপর জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটবে। কিন্তু এর আগেই মার্কিন সরকার ও তার মিত্ররা কোনো পরমাণু সমঝোতা সংক্রান্ত মতভেদ নিরসনের বিষয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে জাতিসংঘের ওই নিষেধাজ্ঞাসহ সব নিষেধাজ্ঞাকে আবার ফিরিয়ে আনতে চায়। কারণ এই সমঝোতার কোনো এক ধারায় এই শয়তানিপূর্ণ বা প্রতারণাপূর্ণ ধারাটি জুড়ে দেয়া হয়েছিল যে পরমাণু সমঝোতা সংক্রান্ত মতভেদ নিরসনে অচলাবস্থা দেখা দিলে তা নিরাপত্তা পরিষদে পেশ করা হবে এবং এরপরও যদি ঐক্যমত্য না ঘটে তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাতিসংঘের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হবে। এ অবস্থায় হারানোর আর কোনো কিছুই বাকি না থাকার কারণে ইরান হয়তো গোটা পরমাণু সমঝোতাকেই বাতিল করবে ও এমনকি পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটি থেকেও বেরিয়ে গিয়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পদক্ষেপ নিতে পারে!
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ হয়তো এ কারণেই আইএইএ ও পাশ্চাত্যকে সতর্ক করতে দিয়ে বলেছেন, আইএইএ'র নির্বাহী পরিষদ যেন পরমাণু সমঝোতার শত্রুদেরকে ইরানের উচ্চতর স্বার্থগুলো বিপন্ন করার সুযোগ না দেয়! কূটনৈতিক পন্থায় বা আলোচনার মাধ্যমে মতভেদ নিরসনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস করা হলে সেই সুযোগ ধ্বংস হবে বলে জারিফ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
সূত্র : পার্সটুডে।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক