জনতার 'মগজ ধোলাই'য়ে 'হীরক রাজা'র কাছে ছিল 'যন্তরমন্তর'! চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সে প্রয়োজন নেই। তিনি আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নাগরিকদের উপর নজরদারিতে জিনতত্ত্ব ব্যবহারে সম্মতি দিয়েছেন তিনি। এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে দ্য ইকনমিক টাইমসে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, চীনের ৭০ কোটি পুরুষের রক্ত নমুনা নেয়া শুরু হয়েছে। এই রক্ত নমুনা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারিতে ব্যবহার করবে রাষ্ট্র। নাগরিকদের উপর নজরদারির জন্য DNA-ডেটাবেস তৈরি করতে ২০১৭ সাল থেকে এই কাজ শুরু করেছে বেইজিং।
অস্ট্রেলিয়ার স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটে প্রকাশিত এক রিপোর্ট এবং দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধুমাত্র কোনও পুরুষের রক্তের নমুনা থেকে তার আত্মীয়ের উপরও নজরদারি চালাতে সক্ষম হবে চীনা প্রশাসন। এই বিষয়ে বেজিংকে সাহায্য করছে মার্কিন সংস্থা থার্মো ফিশার (Thermo Fisher)।
চীনকে নজরদারির যন্ত্রাংশ বিক্রির জন্য ইতোমধ্যেই নিজ দেশে সমালোচিত হয়েছে ওই মার্কিন সংস্থা। ম্যাসাচুসেটসের এই সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চীন সফল হলে, এই নজরদারি পদ্ধতিকে ব্যবহার করে বহু মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র আশঙ্কা করছেন বিশ্বের মানবাধিকার কর্মীরা।
'এই পদ্ধতির সাহায্যে একজনের অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে জড়িত একাধিক জনকে সাজা দিতে পারবে স্বৈরাচারী সরকার।' আশঙ্কা চীনের মানবাধিকার কর্মী মায়া ওয়াংয়ের। শুধু যুবক নন, স্কুলপড়ুয়া কিশোরদেরও রক্ত নমুনা দিতে হচ্ছে এই কর্মসূচিতে। এমনই তথ্য জানা গেছে, চীনের উপকূলবর্তী এক শহর থেকে। দেশের দক্ষিণ প্রান্তের এই শহরে বাড়ি থেকে ২৩০ মাইল দূরে গিয়ে কিশোরদের রক্ত নমুনা দেয়ার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে।
গত বছর এক মানবাধিকার কর্মীর কাছে এই সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছিলেন চীনা নাগরিক জিয়াং হাওলিন। ৩১ বছরের যুবক জানান, 'আমায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, যদি রক্ত দিতে রাজি না হই, তবে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। যার ফলে সরকারি কোনও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হব আমি বা পরিবার।'
হঠাৎ জিনতত্ত্ব?
চিনের অধীনস্থ ইনার মঙ্গোলিয়ার (আউটার মঙ্গোলিয়া স্বশাসিত) এক কুখ্যাত অপরাধীকে খুঁজতে ব্যস্ত ছিল চিনা পুলিশ। প্রায় তিন দশক ধরে ওই ব্যক্তিকে ধরতে ব্যর্থ হয় পুলিশ ও প্রশাসন। দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে ১১ জন মহিলাকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ ছিল। ৮ বছরের নাবালিকাকেও ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ ছিল ওই ব্যক্তির উপর। তবে পুলিশের হাতের নাগালে আসছিল না ওই অভিযুক্ত। ২০১৬ সালে ডাকাতির ঘটনায় অন্য এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। চিনা সংবাদমাধ্য়ম অনুযায়ী, ডাকাতির ঘটনায় অভিযুক্ত ওই যুবকের DNA পরীক্ষা করে তা নিজস্ব রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন চিনা গোয়েন্দারা। জানা যায়, ২০০৫ সালে এক মহিলার ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত এক ব্যক্তির DNA-র সঙ্গে মিলে যায় ডাকাতিতে অভিযুক্তের DNA। জিন-পদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রায় ৩০ বছর ধরে নিখোঁজ থাকা অভিযুক্ত গাও চেংগংকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরায় নিজের সব অপরাধ স্বীকার করে নেয় গাও। পরে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এই ঘটনার পরই জাতীয় DNA ডেটাবেস তৈরির বিষয়টি জোরদার হয়ে ওঠে। সেইমতো ২০১৭-র নভেম্বরে ডেটাবেস তৈরিতে সম্মতি দেয় চিনের জনসুরক্ষা মন্ত্রক। এই নিয়ে মন্ত্রকের কাছে প্রশ্নাবলি ফ্যাক্স করে পাঠিয়েছিল দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। তবে মন্ত্রকের এক আধিকারিক তাদের জানান, ‘ওপরমহলের অনুমতি ছাড়া এই বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না।’
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত