গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তি রাশিয়া। দেশটির দাবি, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক ও ডোনেটস্ক (যা একত্রে ডোনবাস বলা হয়) অঞ্চলকে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠাই এই বিশেষ অভিযানের মূল লক্ষ্য।
যদিও অভিযানের শুরুতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছিল রুশ বাহিনী। তবে পার্শ্ববর্তী বুচা শহরে গিয়ে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পিছু হঁটতে বাধ্য হয় রুশ বাহিনী। পরে তারা ডোনবাসে মনোযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
অভিযানে ইতোমধ্যে মারিউপোল, খেরসনসহ বেশ কয়েকটি শহর দখলে নিয়ে রুশ বাহিনী। এরই মধ্যে রুশ সেনারা পূর্বাঞ্চলীয় ডোনবাসের প্রধান শহর সেভেরোডনিয়েস্ক শহরে ঢুকে পড়েছে বলে সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে।
ডোনবাস এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অবরুদ্ধ শহর সেভেরোডনিয়েস্কের প্রশাসনিক প্রধানকে উদ্ধৃত করে ইউক্রেনের একটি সংবাদ ওয়েবসাইট খবর দিয়েছে রাশিয়ান সৈন্যরা নোভোয়াদার এবং স্টারোবিলস্ক নামে দুটি এলাকা দিয়ে শহরে ঢুকে পড়েছে। তারা প্রায় ১০০ মিটার এলাকার দখল নিয়ে নিয়েছে বলে তিনি জানান।
ডোনবাস কেন রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ
রাশিয়া সেভেরোডনিয়েস্ক শহরটির দখল নিলে পুরো লুহানস্ক এলাকা তাদের দখলে চলে আসবে এবং এটা হবে রাশিয়ার জন্য একটা বড় কৌশলগত অর্জন। লুহানস্ক ডোনবাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল এবং ইউক্রেনের ভারী শিল্প এলাকা।
প্রেসিডেন্ট পুতিন যখন ডোনবাসের কথা বলেন তখন তিনি ইউক্রেনের কয়লা এবং ইস্পাত-উৎপাদনকারী অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেন। এই এলাকা দক্ষিণের মারিউপোল বন্দরশহর থেকে শুরু করে উত্তরে রুশ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত।
পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটো মনে করে রাশিয়া এই অঞ্চল দখল করে নেওয়ার মাধ্যমে দনিয়েৎস্ক থেকে ক্রিমিয়া পর্যন্ত দক্ষিণ উপকূলে একটি স্থল করিডোর প্রতিষ্ঠার করতে চায়।
ব্রিটেনে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট বা রুসির স্যাম ক্র্যানি-ইভান্স বলেন, মূল বিষয় হল - ক্রেমিলন এই অঞ্চলকে ইউক্রেনে রুশভাষীদের অংশ বলে চিহ্নিত করেছে যার অর্থ এই অঞ্চল ইউক্রেনের চেয়েও অনেক বেশি রাশিয়ান নাগরিক রয়েছে। তবে এসব অঞ্চলে হয়তো রুশভাষী লোকেরাই বসবাস করেন, কিন্তু তারা এখন আর রুশপন্থী নন।
ডোনবাস দখল করাকেই রাশিয়া এখন চূড়ান্ত অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং এখানে কোনওরকম শর্ত রাশিয়া আমলে নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
যেহেতু ডোনেটস্ক আর লুহানস্ক বিস্তৃত খনিসমৃদ্ধ এলাকা এবং এই এলাকার সাথে রাশিয়ার একটা ঐতিহাসিক সম্পৃক্ততা আছে।
ফলে এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ রাশিয়া যেকোনও মূল্যে নিতে চায়- তাদের ভাষায় এই এলাকা তারা “স্বাধীন”করতে চায়।
ল্যাভভরভ বলেছেন, “রুশ ফেডারেশন ডোনেটস্ক এবং লুহানস্ক এলাকাকে স্বাধীন রাজ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই দুই এলাকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ রাশিয়ার জন্য শর্তহীন অগ্রাধিকার।”
ইউক্রেনও চাইছে না এই এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাক। কিন্তু এই এলাকার পতন তারা ঠেকাতে পারবে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/কালাম