‘গত দু’বছরের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রকে বাইডেন ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। বিশ্ব নেতৃত্বের আসন থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনের কাতারে এনেছেন। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। জনজীবনের নিরাপত্তা বলতে নেই’ - এসব অভিযোগ তুলে সামনের নির্বাচনে নিজেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
১৫ নভেম্বর মঙ্গলবার রাত ৯টায় ফ্লোরিডা স্টেটের পামবীচে অবস্থিত নিজ বাসা মারে লাগোর বারান্দায় জড়ো হওয়া সমর্থকদের সামনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণার সময় ট্রাম্প আরো বলেন, সদ্য সমাপ্ত মধ্যবর্তী নির্বাচনে আমার সমর্থিত অধিকাংশ প্রার্থীই বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ের এই ধারা অব্যাহত রেখেই ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের মধ্যদিয়ে আমেরিকাকে উদ্ধারের কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। ‘আমেরিকা-কে আবারো মহান’ করতে এই বিজয়ের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প। প্রার্থীতা ঘোষণার প্রাক্কালে তিনি নির্বাচন কমিশন বরাবর ‘ডোনাল্ড জে ট্রাম্প ফর প্রেসিডেন্ট ২০২৪’ ক্যাম্পেইন কমিটির তালিকা সম্বলিত দরখাস্ত সাবমিট করেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছিল এমন জল্পনা-কল্পনা। তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্প যাদের সমর্থন দিয়েছিলেন, এলাকায় গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছিলেন, তাদের ৮০ শতাংশ পরাজিত হওয়ায় রিপাবলিকান পার্টির সর্বস্তরের নীতি-নির্ধারকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রকাশ্যে গণমাধ্যমে উল্লেখ করতেও দ্বিধা করছেন না যে, ট্রাম্পের কারণে রিপাবলিকান পার্টি ডুবতে বসেছে।
যদিও কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার পথে রয়েছে রিপাবলিকান পার্টি। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অটুট রেখেছে ডেমক্র্যাটরা। অর্থাৎ দুই কক্ষের নেতৃত্বে দুই পার্টি। এভাবেই ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখবে মার্কিন কংগ্রেস। এমনি অবস্থায় ট্রাম্পের প্রার্থীতা ঘোষণাকে শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে ‘অপরাধের জন্য জেল-জরিমানা ঠেকানোর কৌশল হিসেবে ট্রাম্প মাঠে নামছেন। অর্থাৎ নির্বাচনে প্রার্থী হলে চলমান তদন্তগুলো থমকে দাঁড়াতে পারে। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে জঙ্গি হামলা এবং হোয়াইট হাউজ ত্যাগের সময় গোপন অনেক তথ্যসম্বলিত ডকুমেন্ট মার-এ- লাগোতে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদিকে গুরুতর অপরাধের সামিল ভাবছে বিচার বিভাগ। এজন্যে ট্রাম্পের কারাদণ্ড হতে পারে বিচারিক প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে চললে।
উল্লেখ্য, পরপর দু’দফা ইমপিচ হওয়া সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সমাবেশে বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন। এমন অবস্থা থেকে আমেরিকাকে উদ্ধারের কাজটি এখন থেকেই শুরু করতে হবে। ট্রাম্প উল্লেখ করেন, আমাদের দেশটি হরিবল অবস্থায় নিপতিত। আমরা সাংঘাতিক একটি পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। গভীর সংকট চলছে। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কাজটি একটি রাজনীতিকের কিংবা প্রচলিত একজন প্রার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়। এটা হচ্ছে বড় ধরনের একটি আন্দোলনের সময়, যার মাধ্যমে পরিত্রাণ লাভ করা সম্ভব।
এদিকে ট্রাম্পের প্রার্থীতা ঘোষণার সংবাদ জেনেই বাইডেন (বিদেশ সফররত) ট্যুইটারে মন্তব্য করেছেন, ‘ডনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকাকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল।’
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণার সময় সাধারণত: সামনের বছরের শেষে হওয়ার কথা। টানা দু’বছর আগে ট্রাম্পের এই ঘোষণায় বিশেষ অভিসন্ধি রয়েছে-তা বলার অপেক্ষা রাখে না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়া সত্বেও ট্রাম্প বরাবরই বলে আসছেন যে, তার বিজয় ছিনতাই করা হয়েছে। এমনি অবস্থায় তৃতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীতার ঘোষণা দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল