বিদ্রোহীদের দাপটে নাজেহাল হয়ে পড়েছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী। একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলে নিচ্ছে তারা। এ অবস্থায় দ্রুত নাগরিকদের সিরিয়া ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে বাশার সরকারের ঘনিষ্ট মিত্র রাশিয়া।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামপন্থি দল হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই দুটি বড় নগরী-আলেপ্পো ও হামা দখলের পর এখন হোমস নগরীর দিকে এগিয়েছে। সেখানে বড় ধরনের লড়াইয়ের আশঙ্কায় লোকজন এরই মধ্যে শহর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছে।
বিদ্রোহীদের এই অগ্রযাত্রায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এবং তার একনিষ্ঠ সমর্থক রাশিয়া ও ইরানের জন্য ঝুঁকি বেড়েছে। এরইমধ্যে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস কুদস ফোর্সের সিনিয়র কমান্ডার, কয়েকজন কূটনীতিক এবং তাদের পরিবার এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের সরিয়ে নিচ্ছে ইরান।
ইরানের মতো একই পথে হাঁটছে মিত্র রাশিয়াও। সিরিয়ার রুশ দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, সিরিয়ার কঠিন সামরিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে, দামেস্কে রাশিয়ান দূতাবাস সিরিয়ায় বসবাসরত রাশিয়ান নাগরিকদের অপারেটিং বিমানবন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে দেশ ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত বিবৃতিতে, কূটনৈতিক মিশন সপ্তাহব্যাপী লড়াইকে সিরিয়ায় একটি কঠিন সামরিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিহিসাবে বর্ণনা করেছে।
দ্য মস্কো টাইমস জানিয়েছে, বিদ্রোহী জোট রাশিয়া এবং ইরান-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করার জন্য ২৭ নভেম্বর উত্তর সিরিয়ায় আক্রমণ শুরু করে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ বিষয়ক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সহিংস লড়াইয়ের পর বহু সামরিক স্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভি সিরিয়ায় রাশিয়ান সমন্বয় কেন্দ্রের বরাত দিয়ে বলেছে, শুক্রবার হামা, ইদলিব এবং আলেপ্পোর গ্রামাঞ্চলে বিদ্রোহীদের সদর দফতর লক্ষ্য করে রাশিয়ান-সিরিয়ান বিমান হামলায় অন্তত ২০০ বিদ্রোহী নিহত হয়েছে।
১৩ বছর আগে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। বিদ্রোহী বাহিনী এবার তাদের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে এসেছে।
২০২২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সিরিয়ার সংঘাতে ৩ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এ সময়ে মূল মিত্র রাশিয়া, ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহর সহযোগিতায় আসাদ সরকার সিরিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে। কিন্তু সবই সম্প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সূত্র : বিবিসি ও মস্কো টাইমস।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত