যুদ্ধবিরতি চুক্তি অমান্য করেছে দখলদার ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পর তিন দিন না যেতেই আবারও লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার সন্ধ্যায় লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের দুটি গ্রামে চালানো এই হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, চুক্তি লঙ্ঘন করে হিজবুল্লাহই প্রথম ইসরায়েলি সেনা চৌকি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ওই হামলার জবাব হিসেবে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির কিছু অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে অবশ্য ইসরায়েলের এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছে, আবারও লেবাননে হামলা চালানোর মাধ্যমেই ইসরায়েলই প্রথম যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ওই হামলায় যে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটির জবাবে ‘প্রতিরক্ষামূলক সতর্কতা’ হিসেবেই ইসরায়েলি একটি সেনা চৌকি লক্ষ্য করে মর্টার হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলের মাউন্ট ডোভ এলাকায় চালানো হিজবুল্লাহর ওই হামলায় যদিও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজের দোষ ঢাকতে হিজবুল্লাহকে দায়ী করে চলছে। তিনি হিজবুল্লাহর হামলাকে ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তির গুরুতর লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ওই হামলা যে ইসরায়েলের হামলার পর হয়েছে সেটা মানতেই চাচ্ছেন না নেতানিয়াহু।
গত সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। এর পর ইসরায়েলের বিমান হামলায় দুই ব্যক্তি নিহত হন এবং জবাবে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের একটি সামরিক অবস্থানে হামলা চালায়। এরপর ইসরায়েল পাল্টা বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালায়, এতে অন্তত ৯ জন নিহত হন বলে জানায় লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হিজবুল্লাহ আরও বলেছে, গত বুধবার থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে ইসরায়েল লেবাননের বিভিন্ন স্থানে প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালিয়েছে, দেশের দক্ষিণে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে এবং বৈরুতসহ লেবাননের আকাশসীমায় ড্রোন ও যুদ্ধবিমান উড়িয়েছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের এই হামলায় দক্ষিণ লেবাননের হারিসে পাঁচজন এবং তালুসাহতে চারজন নিহত হয়েছেন।
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাতের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। সম্প্রতি তারা সরাসরি যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থার অবসানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় গত ২৭ নভেম্বর দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
যদিও গত সপ্তাহে যখন যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, হিজবুল্লাহ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলে সেটার জবাবে পাল্টা হামলা চালাতে দ্বিধা করবে না তার দেশ। এরপর সোমবার পাল্টাপাল্টি হামলার যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে আবারও সংঘাতমত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
চুক্তিতে কী বলা হয়েছিল?
গত ২৭ নভেম্বর যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, সেটির মাধ্যমে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতের অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে আশা করা হয়েছিল। চুক্তিতে বলা হয়েছিল যে, লেবাননে বেসামরিক, সামরিক বা অন্যান্য রাষ্ট্রীয় লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ইসরায়েল আক্রমণাত্মক কোনো সামরিক অভিযান চালাবে না। এর বিপরীতে হিজবুল্লাহও ইসরায়েলে কোনো হামলা চালাতে পারবে না। এমনকি লেবাননের অন্য কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীও যদি ইসরায়েলে হামলা চালাতে চায়, সেখানেও বাধা সৃষ্টি করবে হিজবুল্লাহ।