১৩ এপ্রিল, ২০২১ ০৯:৫৬

রোজার ফাজায়েল এবং মাসায়েল

মুফতি হেলাল উদ্দিন হাবিবী

রোজার ফাজায়েল এবং মাসায়েল

সওম শব্দটি আরবি। এর ফারসি প্রতিশব্দ হলো রোজা। সওমের আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায়, মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের মানসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকাকে সওম বা রোজা বলে। কাম, ক্রোধ, মোহ, রিপু দমন, আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য ও আল্লাহভীতি অর্জনে রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। রোজা ইসলামের পাঁচ ভিতের অন্যতম একটি এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। মহান রব্বুল আলামিন রোজা পালনকারীদের অধিক ভালোবাসেন; তাদের জন্য সন্তুষ্টির নিদর্শনস্বরূপ বিশেষ সুসংবাদ ও পুরস্কারের ঘোষণা করেছেন।

প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, রোজা শুধু আমার জন্য, অতএব আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’ বুখারি।

বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমে উল্লেখ আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা রাখবে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’
প্রিয় নবী (সা.) আরও ইরশাদ করেন, ‘জান্নাতের আটটি দরজা আছে তার একটির নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন ওই দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররা প্রবেশ করবে। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজাদাররা কোথায়? এরপর তারা (রোজাদাররা) ওই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে রোজাদার ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ বুখারি, মুসলিম। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে তাকে জান্নাতের বিশেষ পানীয় পান করানো হবে, ফলে সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।’ মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি, নাসায়ি।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না (অর্থাৎ কবুল করা হয়)- ১. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া ২. রোজাদারের ইফতারের সময়ের দোয়া ৩. মজলুমের দোয়া। তাদের দোয়া মেঘমালার ওপর উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তখন আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, আমার সম্মানের কসম! বিলম্বে হলেও অবশ্যই আমি তোমাকে সাহায্য করব।’ মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ।

প্রিয় পাঠক! রোজার পূর্ণ সওয়াব অর্জন এবং মহান প্রভুর সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য পেতে হলে শুধু পানাহার ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত থাকা যথেষ্ট নয়, বরং মিথ্যা, প্রতারণা, সুদ, ঘুষ, ঝগড়া-বিবাদসহ যাবতীয় অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং চোখ, কান, জিব, হাত-পাসহ সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে গুনাহমুক্ত রাখতে হবে। হাদিসশাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ মুসলিমে উল্লেখ আছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোজা রাখবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার প্রতি মারমুখী হয় তবে সে যেন বলে আমি রোজাদার।’ প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা, অশ্লীল কর্মকান্ড ও জাহেলি আচরণ পরিত্যাগ করতে পারে না তার পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন নেই।’ বুখারি।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন ও ইসলামবিষয়ক গবেষক।


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর