মহান আল্লাহতায়ালা মানব জাতির জন্য সুখ-শান্তির ব্যবস্থা করেছেন। অশান্তি, দুঃখ-দুর্দশাও তিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন আলো ঝলমলে দিন। তাঁর করুণায় মানুষ সুখ, শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করে। বিপদ-আপদ, অভাব-অনটন ইত্যাদিও মানব জীবনের সঙ্গী। তাই কখনো জীবনের চাকা ঘুরে দাঁড়ালে ভেঙে পড়া উচিত নয়। আল্লাহর ওপর আস্থা ও ভরসা রাখতে হবে। তাঁর শরণাপন্ন হতে হবে। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তাঁর সৃষ্টিতে রয়েছে রাতের পর দিন। রাত যত গভীর হয় প্রভাত হয় ততই কাছে। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন- ‘নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি রয়েছে’। (সুরা আল ইনশিরাহ-৬)। মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের পরীক্ষার জন্য অভাব-অনটন, বিপদ-আপদ দিয়ে থাকেন। এ অবস্থায় যারা আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস রেখে ধৈর্য ধারণ করে, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘আমি তোমাদের কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে।’ (সুরা বাকারাহ-১৫৫)। অভাব দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষার জন্য খাদ্য উৎপাদন এবং যাবতীয় আয় খাতে যত্নবান হতে হবে, রোধ করতে হবে অপচয়ের যাবতীয় ছিদ্র। রসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিদের জীবনাদর্শে এর জ্বলন্ত নমুনা রয়েছে। এ পরিসরে অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হলো- অপচয় রোধ করা। অপচয় রোধ করাই দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা পাওয়ার বড় উপায়। খাদ্য অপচয় দুর্ভিক্ষের অন্যতম কারণ। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী পৃথিবীর মোট উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অপচয় হয়। খাদ্য অপচয়ের এমন অসুস্থ প্রবণতা আমাদের জন্য অশনি বার্তা বহন করছে। ঠেলে দিচ্ছে অভাব-অনটন ও দুর্ভিক্ষের পথে। খাদ্য অপচয় ও অপব্যয়ের কারণে খাদ্যের বরকত উঠে যায়। নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, অভাব-অনটন। খাবার হলো মহান আল্লাহতায়ালার অন্যতম অনুদান। এ খাবারের পেছনে মানুষ সময় ও জীবন বিসর্জন দেয়, শ্রম বিনিয়োগ করে। কেউবা একমুঠো খাবারের আশায় দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে। কত মানুষ, কত প্রাণী খাবারের অভাবে মারা যাচ্ছে। রসুলুল্লাহ (সা.) খাবার অপচয় থেকে বাঁচানোর জন্য খাবারের সময় দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়ার জন্য বলেছেন। আনাস ইবনে মালিক (র.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (সা.) টেবিলে আহার করতেন না, ছোট ছোট প্লেটে খাবার নিতেন না এবং তাঁর জন্য পাতলা চাপাতিও তৈরি করা হতো না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি কাতাদা (র.)কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কীসের ওপর খানা খেতেন? তিনি বলেন, দস্তরখানার ওপর রেখে খানা খেতেন। (সহিহ বুখারি)। ইমাম গাজ্জালী (রহ.) লিখেছেন- ‘খানা খাওয়ার শিষ্টাচার হলো দস্তরখানার ওপর খানা খাওয়া।’ (ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন)। মহানবী (সা.) খাদ্যের সম্মান করতেন, তিনি খাবার সংরক্ষণের প্রতি অনেক দায়িত্বশীল ছিলেন। তিনি আঙুল চেটে খাবার খেতেন, খাওয়ার সময় খাদ্যবস্তু পড়ে গেলে উঠিয়ে খাওয়ার নির্দেশ দিতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) খাওয়ার পর তাঁর হাতের তিনটি আঙুল চাটতেন এবং বলতেন যখন তোমাদের কারও খাবারের লোকমা থেকে কিছু পড়ে যায় তখন তা পরিষ্কার করে খেয়ে নেবে এবং তা শয়তানের জন্য ছেড়ে দেবে না। তিনি আমাদের খাওয়ার প্লেট পরিষ্কার করে খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আর বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ অবহিত নয় যে, তার জন্য কোন খাদ্যবস্তুতে বরকত রাখা হয়েছে।’ (আবু দাউদ)। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিটি সুন্নতেই আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মহানবী (সা.)-এর উল্লিখিত সুন্নতের ওপর যথাযথভাবে আমল করা গেলে একদিকে তাঁর আদর্শ অনুসরণের সওয়াব পাওয়া যাবে। আর পৃথিবী মুক্তি পাবে মহাবিপর্যয় ও মারাত্মক দুর্ভিক্ষ থেকে।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা
বিডি প্রতিদিন/এমআই