বাংলাদেশের পর এবার হুইট ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। হুমকির মুখে সীমান্তপারের কয়েক হাজার হেক্টর গমক্ষেত। ছত্রাকনাশক স্প্রে করেও কোন ফল না পাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন এই রোগে আক্রান্ত জমির গম জমিতেই পোড়োনা হচ্ছে, যাতে অন্য জায়গাগুলিতে এই রোগ ছড়িয়ে না পড়ে।
মূলত গমের ব্লাস্ট একটি ক্ষতিকর ফাঙ্গাস বা ছত্রাকজনিত রোগ। ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম ব্রাজিলে দেখা দেয় এই রোগ এবং পরবর্তীতে ব্রাজিলসহ দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে, আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এশিয়ায় এই রোগে প্রবেশ করে ২০১৬ সালে। সেবার বাংলাদেশে গমের ক্ষেত্রে প্রভূত ক্ষতির মুখে পড়ে। ছয়টি জেলার প্রায় বিশ হাজার হেক্টর জমি পুড়িয়ে দিতে হয়। এবার সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গি ব্লকে প্রথম দেখা যায় এই রোগের ছত্রাক পরে তা ডোমকল, রানিনগর-১, নওদা, হরিপারাসহ জেলার একাধিক ব্লকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা প্রবেশ করে বাংলাদেশ লাগোয়া নদীয়া জেলাতেও। ইতিমধ্যেই ওই দুই জেলাতেই লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে জেরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিএসএফ’এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয় এবং প্রতিটি পয়েন্টে খাদ্য শস্য প্রবেশের ওপরও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কৃষি উপদেষ্টা পি.কে.মজুমদার জানান, ‘এটা একটা সিরিয়াস ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই রোগ যাতে নতুন এলাকায় ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে আমরা এর মোকাবিলা করছি। আমরা হুইট ব্লাস্টের সমস্ত লক্ষণই পেয়েছি। একবার যদি এই রোগে আক্রান্ত হয় তবে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই, তাই এই রোগের লক্ষণ দেখার পরই গমের জমি পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। রাজ্যের যে সমস্ত জায়গায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে আমরা সেগুলিকে চিহ্নিত করেছি। পুরো ব্যাপারটি নিশ্চিত হতে বেশ কিছু গমের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছি, আমরা তার অপেক্ষায় রয়েছি। পাশাপাশি যে এলাকায় এই রোগ এখনও দেখা যায়নি সেখানেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে গমের ক্ষেতে ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে।
মজুমদার আরও জানান, ‘ছত্রাকনাশক এই রোগটি বাংলাদেশ থেকে আমাদের রাজ্যে ঢুকেছে। এই রোগের বীজগুলি ভেসে ভেসে একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায় এবং এগুলিকে দমন করাটা অনেক কঠিন ব্যাপার। রোগে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের তরফে।
ইতিমধ্যেই রোগাক্রান্ত দুই জেলার একাধিক জায়গায় কেন্দ্রীয় কৃষি বিজ্ঞানীরা পরিদর্শন করেছেন এবং রাজ্য সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করছেন। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে রাজ্য সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা শাসক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রেখে চলেছেন। সূত্র বলছে, ভারতে এই ‘হুইট ব্লাস্ট’ রোগ প্রবেশ করলে দেশটির গম উৎপাদন ও রপ্তানিকে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
যদিও ইন্ডিয়ান ইন্সিটিউট অফ হুইট এন্ড বার্লি রিসার্চ কার্নাল-এর ডিরেক্টর জ্ঞানেন্দ্র পি সিং জানান, ‘আমি মনে করি না যে এটা হুইট ব্লাস্ট। এর আগে ভারতে কখনও এই রোগ দেখা দেয়নি। তবে সবার প্রথমে আমাদের এই বিষয়টিতে নিশ্চিত হতে হবে’।
বিডি-প্রতিদিন/০৫ মার্চ, ২০১৭/মাহবুব