বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় বিজেপি নেতা ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদভানি, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলী মনোহর যোশী এবং কেন্দ্রের বর্তমান পানিসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতী’র বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রন্ত্রের অভিযোগে চার্জ গঠন করল সিবিআই’এর বিশেষ আদালত। ওই একই অপরাধে চার্জ গঠন করা হয়েছে বিজেপি সাংসদ বিনয় কাটিয়ার, হিন্দুত্ববাদী নেত্রী সাধ্বী রীতম্বরা, বিষ্ণু হরি ডালমিয়া, রাম বিলাস বেদান্তি, রামজন্মভূমি ট্রাস্টের প্রধান নিত্য গোপাল দাস-সহ অন্যান্য অভিযযুক্তদের বিরুদ্ধেও। মঙ্গলবার লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজির হন আদবানী, যোশী, উমা ভারতী সহ অন্যান্য অভিযুক্তরা। এদের সকলের বিরুদ্ধেই ভারতীয় দন্ডবিধির ১২০ বি ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) অভিযোগ আনা হয়েছে।
যদিও বিশেষ সিবিআই আদালতে এরা প্রত্যেকেই জামিন পেয়ে যাওযায় আদভানিদের অবশ্য এদিন আটক করা হয় নি। এদিন ৫০ হাজার রুপির ব্যক্তিগত বন্ডে বিজেপি নেতারা জামিন পান। স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে বিজেপি শিবিরে। বিজেপি নেতাদের জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু জানান এটা আইনি প্রক্রিয়া। আমাদের নেতারা নির্দোষ। সকলেই নির্দোষ প্রমাণিত হবেন’।
অন্যদিকে এদিন আদালতে চত্ত্বরে গিয়ে আদবাভির সঙ্গে দেখা করে আসেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এই মামলা নিয়ে আদভানি বা যোশী কিছু না বললেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। তিনি জানান, ‘আইন আইনের পথে চলবে। এক সময় প্রমাণ হয়ে যাবে। আমি কোন অন্যায় কাজ করিনি’। তবে বাবরি কান্ডের প্রেক্ষিতেই এদিন নতুন করে সুর চড়িয়েছেন বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ। তিনি জানান, বিশ্বের এমন কোন শক্তি নেই যে রাম মন্দির তৈরিতে বাধা দেবে। যেভাবেই হোক অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ হবে বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন তিনি।
গত ১৯ এপ্রিল দেশটির সুপ্রিম কোর্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় সিবিআই-কে। নিয়মিত শুনানির মধ্যে দিয়ে আগামী ২ বছরের মধ্যে এই মামলার শুনানি শেষ করতেও সেসময় নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ার পর্যন্ত কোন ভাবেই এই মামলায় যুক্ত বিচারকদের কোনভাবোই বদলি করা যাবে না বলেও নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। যদিও এরই মধ্যে আদালতে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিতে আদভানি, যোশী, উমা ভারতীরা আদালতে আর্জি জানান কিন্তু তাদের সেই আর্জি খারিজ করে দেয় আদালত। ফলে এদিন তাদের শশরীরে হাজিরা দিতে আদালতে।
আধুনিক ভারতের ইতিহাসে ১৯৯২ সালের ৬ ই ডিসেম্বর দুর্বৃত্তরা ধ্বংস করে দিয়েছিল বাবরি মসজিদকে। অভিযোগ ওঠে ভারতীয় জনতা পার্টি, রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ এবং সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যরাই নাকি নিরাপত্তাবাহিনীর চোখের সামনেই বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। আদভানি, যোশী, উমা ভারতী-সহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ও শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতা সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেইে থেমে থাকেননি, প্ররোচনাও দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার পরই সারা ভারত জুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, মৃত্যু হয় প্রায় ২ হাজার জনের। পরে এই ঘটনার তদন্তে নেমে সিবিআই’এর তরফে দাবি করা হয়, মসজিদের কাছে এক জনসভায় দাঁড়িয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখেন, অভিযুক্ত এই নেতা-নেত্রীরা। তাই এই নেতা-নেত্রীদেরও বিচার প্রক্রিয়ার আওতাধীন আনা উচিত বলে দাবি করেছিল সিবিআই। যদিও ২০১০ সালে সিবিআই’এর দাবি খারিজ করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। ওই রায়ের বিরোধিতা করে সিবিআই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়। এরপরই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে লখনউ আদালতে এই মামলার শুনানি শুরু হয়।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার