১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক কলকাতায় বইমেলায় অংশ নেওয়া শুরু করে পদ্মা পাড়ের প্রতিবেশি বাংলাদেশ। এর তিন বছর পর ১৯৯৯ সালে কলকাতা বইমেলায় ফোকাল থিম কান্ট্রির মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ-কে। সেসময় প্রবাদ প্রতিম সাহিত্যিক শামসুর রহমান উদ্বোধন করেছিলেন মেলার।
২০১৩ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য কলকাতা বইমেলার ফোকাল থিম কান্ট্রি হয় বাংলাদেশ।
আগামী ২০২০ সালে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশকে থিম কান্ট্রির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা নিয়েছে বইমেলা কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে এই বিশেষ মর্যাদা দিতে চায় কলকাতা বইমেলা কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্ক’এর এস.বি.আই অডিটোরিয়ামে চলমান ৪২ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় ‘বাংলাদেশ দিবস’ উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সাধারন সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানান ‘বাংলাদেশ যতবারই ফোকাল থিম কান্ট্রি হয়, ততবারই আমাদের মনের মধ্যে আনন্দের সুর বেজে ওঠে। কারণ সারা বইমেলাটা তখন বাংলাময় হয়ে ওঠে, বাংলা ভাষাময় হয়ে ওঠে। আমারা চাইবো ২০২০ সালে মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর হবে। সেই অর্ধশত বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে আরও একবার ফোকাল থিম কান্ট্রি করা যায় কি না-এই বিষয়টি ভেবে দেখা হোক’। বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আলোচনা চলছে বলেও জানান ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়।
এসময়ে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, শিশু ও নারী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বেগম মেহের আফরোজ চুমকি, পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজাহরুল ইসলাম, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, ভারতের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদার, বাংলা একাডেমী-ঢাকার মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান সহ বিশিষ্টরা।
ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের এই ঘোষনাকে স্বাগত জানিয়ে মাজহারুল ইসলাম জানান ‘কয়েকদিন আগে ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় যখন ঢাকায় একটি সাহিত্য সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলাম, সেসময় আমরা তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম যে ২০২০ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশকে থিমকান্ট্রি করা যায় কি না। তিনি ইতিমধ্যেই তা ঘোষনা দিয়েছেন এবং বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করছেন। এটা খুব ভাল বিষয়’।
এদিন হল ভর্তি দর্শক, শ্রোতাদের উদ্যেশ্যে তিনি বলেন ‘আজকের এই উপস্থিতিই প্রমাণ করে বাংলাদেশের প্রতি, এ দেশের সাহিত্যের প্রতি ও এ দেশের মানুষের প্রতি আপনাদের ভালবাসা’।
পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘বইমেলার মূল অনুষ্ঠান একটি দেশকে উৎসর্গ করা হয়। এবার যেমন ফ্রান্সকে করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশকেও থিম কান্ট্রি করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশকে নতুন করে না করলেও বাংলাদেশের স্টল, সেদেশের বই, সেদেশের মানুষ আসলে আমাদের একটা আলাদা অনুভূতি হয়। বাংলাদেশের মানুষ এলে আমাদের মনে হয় বইমেলাটা কুঁড়ি হয়েছিল, এবার সেটা পুরো ফুল হয়ে ফুটলো। আজ থেকে এটা সম্পূর্ণ হয়ে উঠল’।
উল্লেখ্য গত ৩০ জানুয়ারী কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বইমেলা চলবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বইমেলার এবারের থিম কান্ট্রি ফ্রান্স। ফ্রান্স ছাড়াও ইতালি, জাপান, বাংলাদেশ, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো, ব্রাজিল একাধিক দেশ এবারের বই মেলায় অংশগ্রহণ করছে।
বিডিপ্রতিদিন/ ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/ ই জাহান