সীমান্ত পেরিয়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক এবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও। দিনের পর দিন বাড়ছে অজানা রোগ ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত তিনদিনে রাজ্যটির উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হাবড়াতে অজানা রোগে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। যদিও মৃতদের পরিবারের অভিযোগ ডেঙ্গুতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবারই রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ দফতরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তীসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা ঘটনাস্থলে যান। পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক-তা কার্যত স্বীকারও করে নেন জেলা প্রশাসক।
প্রশাসন সূত্রে খবর, গত এক সপ্তাহ ধরেই জেলার হাবরা, অশোকনগর, বাদুরিয়া, স্বরূপনগর সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অসংখ্য মানুষ অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাবড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকেন। রোগীর তুলনায় হাসপাতালের বেডের সংখ্যা কম হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন রোগীরা। ১৩০ শয্যার হাবড়া হাসপাতালে বর্তমানে রোগীর সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। ফলে একটি বেডে যেমন একের অধিক রোগী গাদাগাদি করছে, তেমনি হাসপাতালের মেঝেতেও ঠাঁই হয়েছে অনেকের। পরিকাঠামোর উন্নয়ন না হলে যে এই সমস্যা যে মিটবে না তা স্বীকার করে নিয়েছেন হাবড়া হাসপাতালের সুপার শঙ্কর লাল ঘোষ।
এর ওপর রবিবার সন্ধ্যা থেকে বারাসত জেলা সদর হাসপাতালে দুই রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে। মৃত দুই নাগরিকের মধ্যে রয়েছেন অশোকনগরের বাসিন্দা রীতা বালা (৪৮) এবং হাবড়ার বাসিন্দা শঙ্কর সরকার (৫৫)। যদিও মৃত্যুর কারণ হিসেবে তাদের কারোরই ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গুর উল্লেখ নেই।
হাবড়া হাসপাতালের পরিসংখ্যান বলছে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৯০ জন জ্বরের রোগী রয়েছে হাসপাতালে। এর মধ্যে ৩১ জনের রক্তে ডেঙ্গুর জীবাণু (এনএস-১) মিলেছে।
এদিকে, মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালে পরিস্থিতি দেখতে ছুটে যান হাবড়ার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী। তারা রোগীর পরিবার ও চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেন। পরে বারাসাতের মহুকুমা শাসক (এসডিও) তাপস বিশ্বাস, হাবরা ১ নম্বর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন কর্মকর্তা (বিডিও) শুভ্র নন্দী, হাসপাতালের সুপার শঙ্করলাল ঘোষসহ হাবড়া পৌরসভার কর্মকর্তাদের সাথে একপ্রস্থ আলোচনা সারেন।
এদিকে, জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের দেখভালের জন্য অতিরিক্ত চিকিৎসক ও নার্সকে নিযুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই হাবরা হাসপাতালে ৬ জন বাড়তি চিকিৎসক ও বেশ কয়েকজন সিনিয়র নার্স ও ট্রেনি নার্সকে নিযুক্ত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা প্রত্যেকেই এই কাজে বহাল থাকবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এই হাবড়া, অশোকনগরসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু সেই ঘটনা থেকেও ডেঙ্গু রোধে প্রশাসন যে আগাম শিক্ষা নেয় তা এই মৃত্যুর ঘটনাতেই পরিষ্কার।
এলাকাবাসীরও অভিযোগ, ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রশাসনের কোন তৎপরতা নেই। নিকাশি ব্যবস্থাও ভালো না।
মশা মারা, জঙ্গল-ঝোঁপ-ঝাড় পরিষ্কার করার কাজেও গতি নেই। যদিও প্রশাসনের দাবি মশাকে নিয়ন্ত্রণে তারা কোন খামতি রাখছে না।
তবে শুধু হাবড়াই নয়, বরানগর, ভাটপাড়াসহ এবাধিক ডেঙ্গু প্রবণ এলাকায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব