২০ অক্টোবর, ২০২০ ১৩:৩৪

কলকাতায় এবারের দুর্গাপূজা কেমন হবে?

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

কলকাতায় এবারের দুর্গাপূজা কেমন হবে?

ফাইল ছবি

দুর্গাপূজার সময় পশ্চিমবঙ্গে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে-এই আশঙ্কা করে চিকিৎসকরা ইতোমধ্যে কড়া সুরক্ষাবিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। পূজার সময় যদি মানুষের ঢল নামে, তাহলে পুরো রাজ্য করোনা সংক্রমণের সুনামিতে পরিণত হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকেরা। 

সোমবার রাজ্যে একদিনে করোনায় আক্রান্ত হন ৩৯৮৩ জন। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে হাসপাতালগুলোতে আসন পাওয়াটাই দুষ্কর হয়ে যেতে পারে, যা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চিকিৎসকদের কাছে। 

চিকিৎসকরা বলছেন মাস্ক, স্যানিটাইজেশন ও সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং-এই তিনটি বজায় রাখতে পারলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচা সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হলো হুজুগে বাঙালি কি আদৌ তা মেনে চলতে পারবে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। বছরভর অপেক্ষা করে থাকে পূজার কয়টি দিনের জন্য। নতুন পোশাক পরে রাত জেগে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে প্রতিমা দর্শন করা, হইহুল্লোড় করা, খাওয়া-দাওয়া মিলিয়েই বাঙালির পূজা কাটে। কিন্তু সেখানে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কতটা সম্ভব, সেটা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। আর এই কারণেই সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকমহল। 

তাদের পরামর্শ মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন এড়িয়ে যথাসম্ভব ঘরে বসে ইন্টারনেটে ও টেলিভিশনের পর্দায় পূজার আনন্দ উপভোগ করা। করোনার পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে একাধিক পূজা মণ্ডপ ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের ক্লাবের পূজা দেখানোর ব্যবস্থা করেছে। শুধু তাই নয়, ঠিক যে কারণ পূজা মণ্ডপগুলোতে ভিড় হয়, তা হলো প্যান্ডেল বা প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে পোজ দিয়ে সেলফি তোলা। আর এই ভিড় এড়াতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সেলফি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে একাধিক ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
 
এমন পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের সব পূজা প্যান্ডেলে দর্শকদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন কলকাতা হাইকোর্ট, যা রীতিমতো ঐতিহাসিক। করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে আদৌ পূজা করার অনুমতি দেওয়া সংগত কি না, তা নিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ আবেদন করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই সোমবার হাইকোর্ট রাজ্যের সব পূজা প্যান্ডেলকে ‘নো এন্ট্রি’ জোন হিসেবে ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়েছে। সেক্ষেত্রে ছোট পূজার প্যান্ডেলের শেষসীমা থেকে ৫ মিটার এবং বড় প্যান্ডেলের চারপাশে ১০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত ব্যারিকেড করে ঘিরে ফেলতে হবে। ‘নো এন্ট্রি’ ঘোষণা করতে হবে সেই ব্যারিকেড করা অংশকে। সেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। পূজার প্রয়োজনে যাদের ঢুকতে হবে, মণ্ডপের বাইরে তাদের নামের তালিকা টানিয়ে রাখতে হবে। মণ্ডপের ভেতর ১৫ থেকে ২৫ জনের বেশি ঢুকতে দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে পূজা কমিটির সদস্য ছাড়া কাউকে মণ্ডপের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এর অর্থ এবার ঠাকুর দেখতে কোনো দর্শকই রাজ্যের কোনো দূর্গাপূজা মণ্ডপে ঢুকতে পারবেন না। 

আর এসব দূরত্ববিধি মানার দায়িত্ব নিতে হবে পুলিশ এবং পূজার উদ্যোক্তাদের। ফলে পুলিশের কাছে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ এই নতুন দায়িত্ব সফলভাবে পালন করা। ইতোমধ্যেই কলকাতাসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নামি পূজা প্যান্ডেলগুলোতেও বাড়তি নজরদারি চলছে। ট্রাফিক যাতে মসৃণ থাকে ও শহরের যানজট না হয় তার ওপরও নজর রাখা হবে। 

এদিকে পূজা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে পুনর্বিবেচার আর্জি জানিয়ে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দোপাধ্যায়ের বেঞ্চে আবেদন জানিয়েছে ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’। 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ
 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর