গত ৬ মাস ধরে বেতন পান না। তাই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অভিনব প্রতিবাদ করলেন শিক্ষকরা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটের বাড়ির পিছনে আদিগঙ্গায় (খাল) নেমে বিক্ষোভ দেখান অনুমোদনহীন মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষকমিত্র সংগঠনের সদস্যরা।
মঙ্গলবার সকালের দিকে এই অভূতপূর্ব প্রতিবাদের চিত্র দেখল রাজ্যবাসী। যদিও পরে পুলিশের অনুরোধে উঠে আসেন প্রতিবাদীরা। তবে পানি যে আরও বহু দূর গড়াবে তারও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তারা।
আদিগঙ্গার পাশেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা ব্যানার্জির বাড়ি। স্থানীয় সূত্রের খবর, এদিন সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের কাছে একটি দল জমায়েত করে। সেখানে পাঁচ ছ’জন ছিলেন। অপর একটি জমায়েত হয় আলিপুর পোস্ট অফিসের সামনে। পুলিশের যাতে কোনওরকম সন্দেহ না হয় তাই দু’ভাগে ভাগ হয়ে আসেন প্রতিবাদীরা। এরপরই চুপচাপ চলে আসেন আদিগঙ্গার ধারে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আদিগঙ্গার খালে ঝাঁপ মারেন প্রতিবাদীরা। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি বলেই অনুমান। কারণ তাঁদের হাতে যে প্ল্যাকার্ড ছিল পানিতে নামার আগে পর্যন্ত সেগুলি প্লাস্টিকে মুড়ে জামার ভিতরে ঢুকিয়ে রেখেছিলেন তারা। আসলে সকলেরই উদ্দেশ্য ছিল আদিগঙ্গা সাঁতরে আরেক পড়ে উঠে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ। কারণ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ওই রাস্তা নিরাপত্তার বেষ্টনীতে মোড়া থাকায় ওই পথে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত কোনভাবেই সম্ভব নয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ছুটে আসেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র সহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। প্রতিবাদীদের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন। এক বুক পানিতে নেমে প্ল্যকার্ড নিয়ে বেতনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন তিনি। আবার কখনও হাউ মাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় ওই মাঝ বয়সী নারীকে।
তাদের থামাতে শেষ পর্যন্ত কয়েকজন পুলিশকেও পানিতে নামতে দেখা যায়। এদিকে আদিগঙ্গার পাড় থেকেও প্রতিবাদিদের থামাতে চলে আকুতি-মিনতি। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী সহ কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদীদের সাথে সাক্ষাত করবেন-এই আশ্বাসে চিড়ে ভেজে। ধীরে ধীরে প্রতিবাদীরা সকলেই পানি থেকে উপরে উঠে আসেন। এই ঘটনায় ছয় জনকে আটক করা হয়।
এদিকে এই শিক্ষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে রাজ্যটির কংগ্রেস সভাপতি সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন ‘আমরা ওদের আন্দোলনকে সমর্থন করছি। প্রতিদিন তারা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হন্যে হয়ে ঘুরছেন অথচ ওদের দাবিকে শোনা হচ্ছে না। উল্টো প্রতিবাদীদের ওপর মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে ভরা হচ্ছে।
যদিও এই ঘটনার পিছনে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি। এদিন বিকালে বারুইপুরে সরস্বতীর পূজার একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আজকের মতো দিনে এই ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। তার দাবি কালীঘাটে যেতে চেয়ে পার্শ্বশিক্ষদের এই আন্দোলনের পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল