২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৭:৪৫

নিয়ম মেনেই ৩০ সেপ্টেম্বর ভবানীপুর কেন্দ্রে ভোট: কলকাতা হাইকোর্ট

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

নিয়ম মেনেই ৩০ সেপ্টেম্বর ভবানীপুর কেন্দ্রে ভোট: কলকাতা হাইকোর্ট

ফাইল ছবি

নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ কলকাতার ‘ভবানীপুর’ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে। মঙ্গলবার উপনির্বাচন সম্পর্কিত এক জনস্বার্থ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের পক্ষ থেকে একথা জানিয়ে দেওয়া হয়। এদিন হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল বলেন, ‘ভবানীপুরে উপনির্বাচন করাতে কোনও বাধা নেই। নির্দিষ্ট সূচি মেনেই ভোট হবে।’ 

উল্লেখ্য, গত মার্চ-এপ্রিল মাসে রাজ্য বিধানসভার ভোটে পুরনো কেন্দ্র ভবানীপুরের বদলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ‘নন্দীগ্রাম’ বিধানসভার কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মমতা। কিন্তু ওই নির্বাচনে ২১৩ টি আসন পেয়ে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এলেও নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পরাজিত হন মমতা। এরপর গত মে মাসে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা শপথ গ্রহণ করেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাজ্যের যেকোন একটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তাকে জয়ী হয়ে আসা জরুরী। আর তা না হলেই রাজ্যে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। আর এই বিষয়টি উত্থাপন করে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী। 

তিনি বলেন ‘ভারতীয় সংবিধানের ১৬৪ (৪) ধারায় একজন মন্ত্রী যদি বিধানসভার সদস্য না হন, তা হলে ভোটের ফল প্রকাশের ছয় মাসের মধ্যে তার মন্ত্রিত্ব চলে যায়। সেই পদে সর্বোচ্চ পদাধিকারী নিয়োগ না হলে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈর হতে পারে।’ আর মুখ্যসচিবের চিঠির প্রেক্ষিতেই ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়। 

কিন্তু নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পরই নির্বাচন প্রক্রিয়া আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পরে। মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন আইনজীবী সায়ন ব্যানার্জি। তার বক্তব্য ছিল কেন একটি মাত্র কেন্দ্রেই উপনির্বাচন করা হচ্ছে। এই ঘোষণা কি কেবলমাত্র মুখ্যসচিবের অনুরোধ রক্ষা করতেই? সেই মামলাতেই এদিন আদালত জানিয়ে দেয় ‘ভোটে কোন বাধা নেই’। তবে নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, যিনি পরাজিত হবেন, তিনি ফের আদালতে যেতে পারবেন বলেও আদালত জানায়। 

উল্লেখ্য এই কেন্দ্রে রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মমতা ব্যানার্জি, বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল ও সিপিআইএম প্রার্থী শ্রীজীব গোস্বামী। 

আগমী ৩০ সেপ্টেম্বর ‘ভবানীপুর’এর সাথেই মুর্শিদাবাদ জেলার সামসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্র দুইটিতেও সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সপ্তম দফায় গত ২৬ এপ্রিল ওই দুই কেন্দ্রে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনায় দুই কেন্দ্রেরই ‘সংযুক্ত মোর্চা’র প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় সেখানে ভোট স্থগিত রাখা হয়। আগামী ৩ অক্টোবর তিনটি কেন্দ্রেই ভোটগণনা। 

সোমবারই এই তিন কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন ছিল। আর শেষ দিনেই বিজেপির প্রচারণাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভবানীপুর কেন্দ্র। যদুবাবুর বাজারে প্রচারণায় গিয়ে বিক্ষোভ ও হামলার মুখে পড়ে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ, ফলে একপ্রকার প্রচার না করেই ফিরে আসতে হয় তাকে। অভিযুক্ত তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা দিলীপ সহ তার দলের কর্মীদের ওপর হামলা চালালে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফেটে যায়, বর্তমানে তিনি চিকিৎসারত রয়েছেন। ওই ঘটনায় ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভের মুখে পড়ে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংকেও ফিরে আসতে হয়। এই অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্ন তুলে ওই কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিতের দাবি তোলেন দিলীপ ঘোষ।

তবে পূজা শেষ হলেই রাজ্যে ফের ভোটের দামামা বাজতে চলেছে। মঙ্গলবারই দেশটির জাতীয নির্বাচন কমিশনের তরফে পশ্চিমবঙ্গের বাকী ৪ (চার) বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষনা দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে আগামী ৩০ অক্টোবর খড়দহ, শান্তিপুর, গোসাবা ও দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হতে চলেছে। আগামী ২ নভেম্বর তার ফলাফল ঘোষনা। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যে সমস্ত রাজ্যে ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলগুলিতে উপনির্বাচন বাকি রয়েছে সেগুলিতেও ৩০ অক্টোবরেই ভোট নেওয়া হবে। 


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর