কলকাতায় বাংলাদেশি সিনেমার চাহিদা বরাবরই ছিল, কিন্তু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব কিংবা কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ছাড়া বাংলাদেশের সিনেমা সেভাবে কলকাতায় প্রদর্শিত হয় না। সাম্প্রতিককালে সেদেশে নির্মিত বেশ কয়েকটি ভালো সিনেমা দর্শকদের মোহিত করেছে। বছর পাঁচেক আগে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেই 'টেলিভিশন' নামক একটি সিনেমা দেখতে নন্দনে প্রচুর সিনেমাপ্রেমী মানুষের ঢল নেমেছিল। ছবিটি দেখে অনেকেই সে সময় প্রশংসা করেছিলেন।
গত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে এক গুচ্ছ বাংলা ছবি দেখানো হয়। ওই উৎসবেও সিনেমাপ্রেমী মানুষদের ঢল নেমেছিল নন্দন চত্বরে। তবে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিল 'হাওয়া' ছবিটি। এমনকি দর্শকদের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে সেই ছবির শো'এর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও নানা কারণে অনেকেরই এই ছবিগুলি দেখার সুযোগ হয়নি।
সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা বলেছিলেন যে সাম্প্রতিককালে কোন একটি নির্দিষ্ট ছবিকে ঘিরে এত উন্মাদনা দেখা যায়নি। যা দেখে ২৮ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও স্পেশাল স্ক্রিনিং এর ব্যবস্থা করেছিল কর্তৃপক্ষ। গতকাল শুক্রবার নন্দন-১ প্রেক্ষাগৃহে এই 'হাওয়া' ছবিটি দেখানো হয়। সেই আগের মতো ভিড়, আগের মতোই উন্মাদনা!
কিন্তু শুধু কি 'হাওয়া'ই বাংলা সিনেমার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়েছে? আদৌ তা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে 'দ্য গোল্ডেন উইংস অফ ওয়াটারকক্স', 'হাওয়া', 'জেকে ১৯৭১', গেরিলা'এর মতো আন্তর্জাতিক মানের কিছু ভালো সিনেমা হয়েছে- যার কারণে ফের বাংলা সিনেমা বিশেষ করে বাংলাদেশি সিনেমার উপর আগ্রহ বেড়েছে। আর সিনেমা দেখার জন্য প্রেক্ষাগৃহের বাইরে উৎসুক মানুষের ভিড়ই তা জানান দেয়।
বছর পাঁচেক আগে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশি সিনেমা দেখে প্রতিবেশী দেশটির সিনেমার প্রেমে পড়েছিলেন ধীমান ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ছবি আমি প্রত্যেক চলচ্চিত্র উৎসবেই দেখি। পাঁচ বছর আগে টেলিভিশন নামক একটি ছবি দেখে বাংলাদেশের ছবির প্রেমে পড়ে যাই। সম্প্রতি হাওয়া ছবিটি নিয়ে একটা হাইপ তৈরি হয়েছে। দেখার খুব ইচ্ছে।
কলকাতা সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থী প্রীতম দাস বলেন, সিনেমার কথা ধর্ম, জাতি কাঁটাতার হয় না। সিনেমা দিয়ে আমরা একটা দেশে বসে আরেকটা দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারি। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিবছরই বিভিন্ন দেশের ছবি তুলে ধরা হয়। এজন্য কর্তৃপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ। বিশেষ করে এই উৎসবে বাংলাদেশের 'হাওয়া' ছবি দেখাটা আমাদের কাছে সৌভাগ্যের বিষয়।
১৫ থেকে ২২ ডিসেম্বর- আট দিনব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসবে ৪২ দেশের মোট ১৮৩ টি ছবি দেখানো হবে। এই চলচ্চিত্র উৎসবে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের মোট চারটি সিনেমা। এগুলি হল পরিচালক মো. কাইয়ুম এর 'দ্য গোল্ডেন উইংস অফ ওয়াটারকক্স', পরিচালক ফখরুল আরেফিন খানের 'জেকে ১৯৭১', পরিচালক গৌতম ঘোষের 'মুজিব ইন ক্যালকাটা' এবং পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের 'হাওয়া' সিনেমা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল