সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

ভালোবাসার টানে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে

রাহাত খান, বরিশাল

সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে ভালোবাসার টানে বাংলাদেশে এসে বরিশালের যুবক কাইয়ুম আহম্মেদকে বিয়ে করেছেন নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটির বাসিন্দা হাফিজা আহম্মেদ ফ্যালেসিয়া। শনিবার রাতে নগরীর অভিজাত বরিশাল ক্লাব লিমিটেডের হল রুমে মহাধুমধামে বিয়ে হয় তাদের। শনিবার রাতে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ১ হাজার অতিথিকে আপ্যায়ন করা হয়। এর আগে ২৩ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ১০ হাজার ১ ডলার দেন মোহরে ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কাইয়ুম ও ফ্যালেসিয়ার আক্দ সম্পন্ন হয়। আকেদর আগে ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী সামান্থা ফ্যালেসিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তার নতুন নাম রাখা হয় হাফিজা আহম্মেদ ফ্যালেসিয়া। নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা আলতাফ স্কুল রোডের মৃত আলহাজ আহম্মেদ আলী হাওলাদার ও ফিরোজা বেগম দম্পতির ৬ ছেলেমেয়ের মধ্যে পঞ্চম কাইয়ুম ২০০৫ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দেন। সেখানে ইউনিভার্সিটি অব বালারাত থেকে প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করে ৬ বছর ধরে মেলবোর্নের হ্যালো ওয়ার্ল্ড লিমিটেড কোম্পানিতে অ্যাকাউন্টস টিম লিডার পদে চাকরি করছেন কাইয়ুম।

নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটির রুবেন ড্যান ও প্রয়াত ট্যান ইন ডিয়ক দম্পতির ৪ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট ফ্যালেসিয়া অকল্যান্ডের গ্লেন ফিল্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাস করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য যান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে লেখাপড়া শেষে চাকরি নেন মেলবোর্নের হ্যালো ওয়ার্ল্ড লিমিটেড কোম্পানির প্রকিউরমেন্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে কাইয়ুম ও ফ্যালেসিয়ার মধ্যে পরিচয় এবং জানাশোনা হয়। এক পর্যায়ে তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। মেলবোর্নে কাইয়ুমের ঘনিষ্ঠ বরিশালের অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয় ফ্যালেসিয়ার। তাদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে এবং ইন্টারনেটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের অপরূপ প্রকৃতিক সৌন্দর্যে সবুজে ঘেরা এই দেশকে ভালোবেসে ফেলেন ফ্যালেসিয়া। তাদের সম্পর্ক গড়ায় প্রণয় পর্যন্ত। অবশেষে দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে পাকাপাকি হয়। বিয়ের প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করতে ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় যান কাইয়ুমের পরিবারের সদস্যরা। বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ৪ মার্চ স্বামীসহ বাংলাদেশে আসেন ফ্যালেসিয়া। কয়েকদিনে শ্বশুরবাড়ি অর্থাৎ বরিশালের মানুষের ভালোবাসা তাকে আপন করে নিয়েছে। শনিবার রাতে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফ্যালেসিয়াকে বেশ হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে। এ সময় শুদ্ধ বাংলায় ‘আসসালামুআলাইকুম’ বলে আগত অতিথিদের স্বাগত জানান নববধূ হাফিজা আহম্মেদ ফ্যালেসিয়া। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তিনি বিমোহিত এবং মুগ্ধ। এ দেশের মানুষ খুবই সহজ-সরল। তারা খুবই আন্তরিক এবং অতিথিপরায়ন। ফ্যালেসিয়া বলেন, বাংলাদেশ খুবই নিরাপদ দেশ। এখানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে তাদের অস্বস্তি নেই। এ দেশের মানুষের ভালোবাসার টানে তিনি বারবার বাংলাদেশে ফিরে আসবেন এবং গ্রাম বাংলার সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করবেন। ফ্যালেসিয়ার স্বামী কাইয়ুম আহম্মেদ বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশিদের নেতিবাচক ধারণা পাল্টানোর সময় এসেছে। বাংলাদেশ ভ্রমণে যেসব দেশের নিরাপত্তা সতর্কতা রয়েছে, তা প্রত্যাহার করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক কাইয়ুম। কাইয়ুমের বড় বোন সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আয়শা তৌহিদ লুনা বলেন, ফ্যালেসিয়া ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথা বলতে শিখেছেন। সে শ্বশুর পরিবারের সবাইকে আপন করে নিয়েছেন। বিদেশিনী বধূর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আশপাশের বহু মানুষ তাকে দেখতে তাদের বাড়ি ভিড় করছে বলে জানান লুনা। পারিবারিক সূত্র জানায়, ফ্যালেসিয়ার বাবা ও মা দুজনই ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক। পরবর্তীতে তারা সপরিবারে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটিতে বসবাস শুরু করেন এবং নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্ব পান। পড়াশোনা এবং চাকরির সুবাদে ফ্যালেসিয়া অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। পড়াশোনার সুবাদে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া কাইয়ুমও অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক হয়েছেন কয়েক বছর আগে। আগামী ১৯ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন নবদম্পতি।

সর্বশেষ খবর