বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

অনলাইনে জঙ্গি বানানোর ফাঁদ

মাহবুব মমতাজী

অনলাইনে পেতে রাখা হয়েছে জঙ্গি বানানোর বিভিন্ন ফাঁদ। কিশোর বয়সীরা সরকার বা রাষ্ট্রের সমালোচনা করছে কিনা, তারা অন্য ধর্মের প্রতি কী ধরনের মন্তব্য করছে, এসব দেখতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রুপ খুলে সমসাময়িক ইস্যুতে নানা পোস্ট দিয়ে ওত পেতে বসে এসব ফাঁদ পাতছে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো। গত কয়েক বছর ধরে এভাবেই জঙ্গিরা আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিদের বেশকিছু এক্সপার্ট গ্রুপ অনলাইনে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনায় সক্রিয় রয়েছে। এরা আইটি বিষয়ে বেশ পারদর্শী। এরা ইন্টারনেটে বিভিন্ন নামে ওয়েবসাইট-ব্লগ খুলে এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গিবাদের প্রচারণা চালিয়ে আসছে।

গত রবিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার এমন দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এরা হলেন মেহেদী হাসান তামিম ও আবদুল্লাহ আজমির। সিটিটিসি বলছে, এর মধ্যে তামিম গুলিস্তান ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। তিনি নিজে বোমা বহন করে ছুড়েছিলেন আর আজমির বোমাটি তৈরি করেন।

সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, তামিম ও আজমির দুজনই খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে পাস করেন। আইএসের নামে যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সেটি চারজন মিলে তৈরি করেন। এর একজন আজমির। আজমির একটি করপোরেট কোম্পানিতে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। তারা অনলাইনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান। তারা আইএসের সঙ্গে  যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই ছিল পুলিশের ওপর হামলার উদ্দেশ্য। জেএমবিতে যোগ দেওয়ার আগে তারা বিভিন্ন মতাদর্শ সম্পর্কে ধারণা নেন। এর মধ্যে জেএমবি বেস্ট ভেবে তারা একটি গ্রুপ তৈরি করেন। গত বছরে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগে গ্রেফতার হন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মোমেনা সোমা। তিনি অনলাইনে জঙ্গিবাদের উপকরণ দেখে উদ্বুদ্ধ হন বলেও সে সময় জানিয়েছিল সিটিটিসি। সূত্র জানায়, জঙ্গিরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদের সমর্থনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজ খোলে তারা। এতে অনেকেই ভিজিটের পাশাপাশি লাইক ও কমেন্ট করে। এখান থেকে টার্গেট ব্যক্তিকে খুঁজে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে জঙ্গিরা। জঙ্গিরা যে এ ব্যাপারে সফল, সে প্রমাণও মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। রাজধানী থেকে গত কয়েক বছরে দাওয়াতুল ইসলাম বাংলাদেশের ওয়েবপেজ আত-তামকিনের প্রধান প্রশাসকসহ র‌্যাব-পুলিশ অনলাইনে জঙ্গিবাদ কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে জড়িত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অন্তত ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। জঙ্গিরা সদস্য সংগ্রহের শুরুতেই ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি ও পেজের মাধ্যমে দাওয়াত পাঠায়। এরপর কৌশলে নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপস যেমন ইমো, টেলিগ্রাম, থ্রিমার মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রচারের অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ৩০টি পেজ ও আইডি চিহ্নিত এবং তা অপসারণে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট ব্যবস্থা নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেফতার সোমা ও তার বোন আসমাউল হুসনা সুমনা অনলাইনে আইএস-আলকায়েদার ছড়িয়ে রাখা উপকরণ দেখে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। হামলা চালানোর আগে বাসায় পুলিশ এলে তাদের ওপর হামলা করতে তিনি ছোট বোনকে নির্দেশও দেন। অনলাইনে সক্রিয় এমন সদস্যসংখ্যা অন্তত ২৫০ জন। এর অনেকে চুপচাপ ঘাপটি মেরে আছেন। এ ছাড়া ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ কথিত হিজরতের নামে বাড়ির বাইরে আছে। গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর তেজগাঁও থেকে জেএমবির দুই জঙ্গিকে আটক করে র‌্যাব-২। এর একজন নাজমুল ইসলাম শাওন। তিনি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। তিনি একই পেশার মানুষদের মাঝে অনলাইনে উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে যোগদান করান বলে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেন। এর আগে ২০১৫ সালের মার্চে ফেসবুকের মাধ্যমে আবু আবদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আবদুল্লাহর হাত ধরে তার জেএমবিতে যোগদান। এরপর জেএমবির অন্য সদস্য সুলায়মান ওরফে আজাহারের সঙ্গে পরিচয় হয়। শাওনের তথ্যানুযায়ী, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনলাইনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রায় ৪০-৫০ জন সমমনা উগ্রবাদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।

সর্বশেষ খবর