বিশ্বে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। কৃষিপণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবজি রপ্তানি নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। রপ্তানি করা পণ্যের কায়িক মান ঠিক রেখে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের সঙ্গে ধারাবাহিক হতে না পেরে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, কাঁচা পণ্য রপ্তানিতে সবচেয়ে বড় বাধা অতিরিক্ত বিমানভাড়া ও কার্গো শিডিউল না পাওয়া। ভিন্ন কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, কাঁচা পণ্য রপ্তানি কমার পেছনে ব্যবসায়ীদের হাত রয়েছে।
সূত্রাপুরের ফার্দিন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শেখ জাকির হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পণ্য রপ্তানির জন্য পরিবহন, প্যাকেজিং এবং অন্যান্য খরচ অনেক বেশি, যা রপ্তানি বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। প্রতি কেজি কাঁচা সবজি রপ্তানিতে খরচ হয় ৪২০ টাকা।
বিশ্লেষকদের মতে, উন্নত মানের পণ্য সরবরাহ এবং নতুন বাজার সৃষ্টিতে পিছিয়ে থাকার কারণেও রপ্তানি কমে যাচ্ছে। সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য সরকারের উচিত কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া, উৎপাদন খরচ কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার জন্য নীতি প্রণয়ন করা, রপ্তানিযোগ্য পণ্যের সঙ্গে মানহীন পণ্যের মিশ্রণ না করা।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুসারে গত চার বছরে কাঁচা পণ্য রপ্তানিতে ধারাবাহিকতা ছিল না। শেষ তিন অর্থবছরে গড়ে ৩ লাখ ডলার রপ্তানি আয় কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাঁচা পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ১৯০ ডলার। ৪৫ শতাংশ বেড়ে ২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ১১ কোটি ২৪ লাখ ৭০ হাজার ৮৪৮ ডলার। ৩৫ শতাংশ কমে ২৪-২৫ অর্থবছরে ৮ কোটি ১১ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৫ ডলারের কাঁচা পণ্য রপ্তানি হয়েছে। সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, কার্গো স্পেস কম থাকা, দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ ভাড়া পরিশোধ করাসহ কাঁচা পণ্য রপ্তানিতে বেশ কিছু সমস্যায় আছি আমরা। ভারত সরকার ভর্তুকি দিয়ে সবজি রপ্তানি করলেও আমাদের সরকার নামমাত্র ভর্তুকি দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে বেগুন-কাঁকরোলে পোকা, পানে সেলমন ভাইরাস ও লেবুতে কনকার উপস্থিত থাকায় সবজি রপ্তানি কম ছিল। গবেষণার মাধ্যমে সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠলেও ব্যবসায়ীদের সচেতনতার অভাবে পণ্য রপ্তানি কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।