আমি আমার মুসলিম ভাই-বোনদের স্মরণ করাতে চাই—বাক্যও এক ধরনের কর্ম, যার ওজন আছে বর্তমান সময়ে এবং যার পরিণতি আছে পরকালেও। সুতরাং নিজের কথাবার্তায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা রাখা অত্যন্ত জরুরি।
যেমন আপনি আপনার হাত দিয়ে কাউকে আঘাত করবেন না, তেমনি কাউকে আঘাত করা উচিত নয় আপনার জিহ্বার দ্বারা—না আঘাতের জন্য, না চাটুকারিতার জন্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘শ্রবণ, দৃষ্টি ও হৃদয়—সব কিছুর জবাবদিহি করা হবে।’ (সুরা : আল-ইসরা, আয়াত : ৩৬)
মুয়াজ ইবন জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সব বিষয়ের মস্তক হলো ইসলাম, এর স্তম্ভ হলো নামাজ, আর এর চূড়া হলো জিহাদ। তারপর তিনি বলেন, আমি কি তোমাকে সব কিছুর মূল কথা বলে দেব না? আমি বললাম, জি হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল। তিনি তাঁর জিহ্বার দিকে ইশারা করে বলেন, এটা নিয়ন্ত্রণ করো। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমরা যা বলি তারও কি হিসাব হবে?
তিনি বলেন, তোমার মায়ের মৃত্যু হোক, হে মুয়াজ! মানুষকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামে ফেলবার আর কী কারণ আছে, তাদের জিহ্বার ফসল ছাড়া?’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬১৬)
বিশেষভাবে আমি আমার ভাই-বোনদের সতর্ক করতে চাই—অতিরিক্ত ভাষা, বাড়াবাড়ি প্রশংসা এবং অতিরিক্ত নিন্দার ব্যাপারে। বাড়াবাড়ি প্রশংসা ক্ষতিকর, এমনকি যদি সেটি প্রাপ্য হয়। আমাদের কথাবার্তা সব সময় চিন্তিত, সংযত ও ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া উচিত, বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হলো কাউকে মুনাফিক বা কাফির বলে আখ্যা দেওয়া। এসব চূড়ান্ত রায় একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের এখতিয়ার।
হ্যাঁ, আমর বিল-মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার বলেন, (সৎ কাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ) দায়িত্বের আওতায় নির্দিষ্ট কিছু কাজ, বক্তব্য বা নীতির সমালোচনা করা বৈধ। কিছু পরিস্থিতিতে মানুষকে তাদের ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামও উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে তাতেও অনুমতি নেই এভাবে ভাবা যে কেউ যদি দু-একটি বিষয়ে ভুল করে, তবে সে সব কিছুতেই ভুল করছে।
আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায়ের সাক্ষী হয়ে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াও, এবং কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি তোমাদের ঘৃণা যেন তোমাদের ন্যায়বিচার থেকে বিরত না রাখে। ন্যায়বিচার করো, সেটাই তাকওয়ার নিকটবর্তী। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কাজের খবর রাখেন।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮)
কোনো অবস্থায়ই এমন কাউকে—যে নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেয়, কাফির বা মুনাফিক বলা বৈধ নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে তার ভাইকে বলল, হে কাফির, তবে এ কথা তাদের একজনের ওপর ফিরে যাবে।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
তিনি আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে কুফরির অভিযোগ করে, তা যেন তাকে হত্যা করার সমতুল্য।’ (সহিহ বুখারি)
আমাদের কর্তব্য হলো, এমন শব্দ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। এই ধরনের নিষিদ্ধ অভিযোগ প্রচার বা প্রচলন করা উচিত নয়, কারণ তা অনেক সময় রাগের বশে বা কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক চাপে উচ্চারিত হতে পারে। হ্যাঁ, কোনো অভিযোগকে সমর্থন করার জন্য যেসব তথ্য বা যুক্তি আনা হয়, সেগুলো প্রকাশ ও আলোচনা করা বৈধ এবং অনেক সময় উপকারীও। কারণ তথ্য ও যুক্তির সৎ আলোচনা হলো সেই তথ্য ও যুক্তিকে যাচাই করার যথাযথ উপায়।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম