রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফ্ল্যাটে দুই নারী খুনে সন্দেহের কেন্দ্রে একজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ধানমন্ডিতে গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগম ও গৃহকর্মী দিতির খুনের ঘটনার রহস্য এখনো উদ্ঘাটন হয়নি। গ্রেফতার হয়নি সন্দেহভাজন নতুন গৃহকর্মী। জোড়া খুনের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাকি নিছক ডাকাতির ঘটনা, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, গৃহকর্মীর নাম-পরিচয় জানা না গেলেও এই হত্যাকান্ডের মূল হোতা হিসেবে তাকেই সন্দেহ করা হচ্ছে। মূলত তাকে ঘিরেই চলছে প্রাথমিক তদন্ত। তবে এর বাইরে অন্য আর কারও জড়িত থাকার বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সবকিছু বিবেচনায় এনেই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এদিকে আফরোজা বেগম ও দিতির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দুজনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গতকাল এই জোড়া খুনের ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। ধানমন্ডি থানার ওসি আবদুল লতিফ জানান, ‘আমরা ওই বাড়ির দারোয়ান, কেয়ারটেকার, ইলেকট্রনিক মিস্ত্রিসহ কয়েকজনকে জিম্মায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আমরা ওই বাসার সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। ঘটনার মোটিভ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।’ ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকা-। যদিও ওই বাসায় গিয়ে আমরা আলমারি ও ড্রয়ার ভাঙা অবস্থায় পেয়েছি। ডাকাতির কারণে দুজনকে গলা কেটে হত্যার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। সেজন্য আমরা পুরো বিষয়টি আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখার চেষ্টার করছি।’ আফরোজা বেগমের বোনের ছেলে মোশারফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই বাসার মোট আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা সবাই বাসার দারোয়ান, মিস্ত্রি আর কেয়ারটেকার। এ ছাড়া মনির উদ্দিনের পিএস বাচ্চুকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, আফরোজা বেগম লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ছিলেন। পাশাপাশি ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত ছিলেন বলে জানান মোশারফ হোসেন। তিনি আরও বলেন, ‘উনার কোনো শত্রু নেই। রোগের কারণে সারাক্ষণ ঘরেই থাকতেন। তাহলে কেন তাকে হত্যা করা হলো।’ আর যদি শুধু জিনিসপত্র বা টাকা নিতেই আসে তাহলে তো সেগুলো নিয়ে গেলেই পারত, এর জন্য তাদের হত্যা করবে কেনথ- এ প্রশ্নও রাখেন মোশারফ। পুলিশ জানায়, আফরোজা বেগমের মেয়ের জামাই মনির উদ্দিন তারিমের পিএস বাচ্চুর এক ব্যক্তির মাধ্যমে নতুন গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তির মাধ্যমে ও সিসি ফুটেজের মাধ্যমে ওই গৃহকর্মীর ছবি শনাক্ত করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার পর পুলিশ ওই বাসায় প্রবেশ করে দেখেন বাসার আলমারি খোলা। নগদ টাকাসহ দামি মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া গেছে। এদিকে গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহ দুটির ময়নাতদন্ত করেন ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. কবির সোহেল। ময়নাতদন্তের বিষয়ে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. কবির সোহেল জানান, ময়নাতদন্তের সময় তাদের গলায় ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি দুজনের শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরীক্ষার জন্য গৃহকর্ত্রীর ভিসেরা ও গৃহকর্মী দিতির হাই ভেজিনাল টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

মৃত্যুর আগে দিতি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা, এই পরীক্ষায় তা জানা যাবে। গত শুক্রবার রাতে ধানমন্ডির ২৮ নম্বর সড়কের ২১ নম্বর বাসার পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে আফরোজা বেগম ও তার গৃহকর্মী দিতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

সর্বশেষ খবর