বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ন দী র কা ন্না

দখল-দূষণে শেষ ডাকাতিয়া

ফারুক আল শারাহ, লাকসাম (কুমিল্লা)

দখল-দূষণে শেষ ডাকাতিয়া

এককালের খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদী এখন মৃতপ্রায়। নেই জোয়ার-ভাটার উত্তাল ঢেউ। অবৈধ দখল আর দূষণে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে নদীটি। চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। নতুন উদ্যোগে নাব্য ও জৌলুস ফিরে আসবে  ডাকাতিয়ার। এ সংবাদে নদী এলাকার মানুষ মহাখুশি। সূত্রে জানা যায়, ডাকাতিয়া বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তসীমান্ত নদী। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০৭ কিলোমিটার, প্রস্থ প্রায় ৬৭ মিটার (২২০ ফুট)। এটি মেঘনার একটি উপনদী। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লার বাগসারা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং পরে চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি কুমিল্লা-বৃহত্তর লাকসাম, চাঁদপুরের শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জ উপজেলা অতিক্রম করে চাঁদপুরের মেঘনায় মিলিত হয়েছে। নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।

নদীটির নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মত আছে। এ নদী দিয়ে একসময় মগ-ফিরিঙ্গি জলদস্যুরা কুমিল্লায় প্রবেশ করত এবং নদীতে ডাকাতি করত। ডাকাতের উৎপাতের কারণে নদীটির নাম ডাকাতিয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আবার কারও মতে, ডাকাতিয়া নদীর করাল গ্রাসে দুই পাড়ের মানুষ সর্বস্ত হারাত। জীবন বাঁচাতে ডাকাতিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে বহু মানুষের সলিলসমাধি হয়েছে। ডাকাতের মতো সর্বগ্রাসী বলে এর নামকরণ হয়েছে ডাকাতিয়া নদী। বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত থাকলেও ডাকাতিয়া নদী একসময় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য সুফল বয়ে এনেছে। নদীতে চলত স্টিমার ও বড় বড় নৌকা। পণ্য পরিবহন ছিল সহজ। কৃষক পেত সেচ সুবিধা। বর্ষা মৌসুমে ডাকাতিয়ার গর্জন শুনতে দুই ধারে চোখে পড়ত পর্যটকের ভিড়। এখন ডাকাতিয়ার পাড় নেই। নেই পর্যটকের আনাগোনা। নেই পানির গর্জন। দুই পাড় দখলে নিয়েছে দখলদাররা। ডাকাতিয়ায় একসময় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন সুস্বাদু মাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে গভীরতা ও প্রশস্ততা কমে যাওয়ায় খুব বেশি মাছ পাওয়া যায় না। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ডাকাতিয়া নদীর দুই পাড় অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে কলকারখানার দূষিত বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলে বিষাক্ত করে তোলা হয়েছে। নদীতীরের আশপাশের বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে নদীর পানি দূষিত হয়ে মশা-মাছির উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়ে নানা রোগব্যাধি ছড়াচ্ছে। সর্বোপরি কালের বিবর্তনে মরতে বসেছে ডাকাতিয়া। এতে নদীটির সুফল থেকে বঞ্চিত নদী এলাকার কৃষক, ব্যবসায়ীসহ ভ্রমণপিপাসুরা। গত বছরের ২ মার্চ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ডাকাতিয়া নদীর দুই তীর পরিদর্শনে এসে খনন ও উচ্ছেদ অভিযান শুরুর ঘোষণা দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপির আন্তরিকতা ও তৎপরতায় ডাকাতিয়ার নাব্য ও জৌলুস ফিরে আসার বিষয়ে আশার আলো দেখছেন নদী এলাকার কৃষক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। মন্ত্রী নদীটির নাব্য ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দুই তীরকে দৃষ্টিনন্দিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা অব্যাহত রেখেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নেতৃত্বে ডাকাতিয়া নদীর লাকসাম অংশে পরিদর্শনে আসেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমান, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীরসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

পরিদর্শনকালে পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, আগের মতো ডাকাতিয়া নদীর নাব্য ও জৌলুস ফিরিয়ে আনা হবে। নির্বিঘ্ন নৌচলাচলের মাধ্যমে ব্যবসায়ী এবং সেচ সুবিধার মাধ্যমে কৃষক যাতে নদীটির সুফল ভোগ করতে পারেন এজন্য শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর