‘বাবা,
‘তুমি তো গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়েছো। ছেলে যেখানে থাকে সেখানেও। বিদেশে থাকা ছেলেদের সময়ের দাম কত বেশি। একটা কিছু বলে দেওয়া দরকার না?’
‘ওরা কিন্তু ঠিক বিয়ের প্রস্তাব দেয়নি। যতই বলি না, দিন বদলেছে। আমরা মেয়েপক্ষ।
‘আচ্ছা বাবা তাহলে ওরা বললে তুমি না করবে না, তাই তো?’ প্রতিষ্ঠান মানুষকে সাহসী করতে পারে। তিনি যে প্রতিষ্ঠানে ছিলেন তা খুব শক্তিশালী কিন্তু তার ক্ষেত্রে সেটিও কার্যকর হয়নি। ত্রিশ বছর ইউনিফরম পরে তিনি তাঁর সহকর্মীদের যে কাজ করতে দেখেছেন তার অধিকাংশকেই তার কাছে অন্যায় মনে হয়েছে। তবে জীবনে সফল বড় মেয়ের এ কথায় তিনি ভালো বোধ করলেন। ছোটবোনের বিয়ের প্রস্তাবটা ওরই চেষ্টায় এসেছে।
যখন এনগেজমেন্ট এবং আকদ-এর সাজসরঞ্জাম আসা শুরু হলো, জামাল ভাবলেন আমাদের দেওয়া জিনিসগুলো কেমন যেন, এর তুলনায় সামান্য দেখাচ্ছে। তার অপ্রস্তুত এবং লজ্জিতভাব দেখে স্ত্রী বললেন, ‘ছেলে আমেরিকায় চাকরি করে, তাদের আয়োজন তো এমনই হবে। তুমি ও নিয়ে অত ভাবছ কেন?’ বলা বাহুল্য, সব নারীর কথা এমনই হয়।
বাঙালির বিয়ের প্রথম বছরটি সাধারণত ঝড়ের বেগে চলে যায়। তারপর? থাক, ওটা অনেকেই বলেছেন।
মিসোওরি পৌঁছার দু ঘণ্টা পরই রাশাকে ছুটতে হলো অফিসে। রাশা বিয়ে করতে যাওয়ার আগেই মোটামুটি বড় একটা বাসা ভাড়া নিয়ে রেখেছিল। ফার্নিচার না আনতে পারলেও বিয়েতে পাওয়া অন্যান্য জিনিসপত্রের অনেকটাই ওরা সঙ্গে নিয়ে এসেছে। খাট, ডাইনিং টেবিল, ডিভান ও সোফা সেট- রাশা কিনে মোটামুটি বাড়ি সাজিয়ে রেখে গেছিল। ঘর গোছাতে গোছাতে দুজনের মধ্যে গল্প চলল।
‘ঢাকার কথা মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই।’
‘হ্যাঁ; তবে বাবা-মা আর আপুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি তুমি অফিসে যাওয়ার পরই। ওরা তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছেন।’
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ পার হয়েছে। ওদের বাসাটা একটা সুন্দর জায়গায়। কাঠের তৈরি। এখন শীত পড়া শুরু হয়েছে। জানালা দিয়ে রান্নাঘর থেকে পাহাড় আর বার্চ গাছ দেখা যায়। বাসার সামনে দিয়ে একটা চওড়া রাস্তা শহরের কেন্দ্রে চলে গেছে। নাম গভর্নর রোড। দেশের ভয়াবহ জনসমুদ্র, দুর্গন্ধ এবং গরমের কথা মনে করে এই ঠান্ডা এবং প্রায় জনমানবহীন নীরবতা আর সবুজের মাখামাখি খুব ভালো লাগে। রাশা সকাল ৭টায় বেরিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় ফেরে।
ইংরেজি এবং মনস্তত্ত্বে মানুষ সম্পর্কে একটি কথা ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হয়। তাহলো ‘ইমপ্রুভড বিহেভিয়ার ডিউরিং দ্য ফার্স্ট ফেজেস অব অ্যাকুইনটান্স।’ মানে পরিচয়ের প্রথম স্তরগুলোতে মানুষ পরস্পরের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। প্রাথমিক স্তর অতিক্রান্ত। মনের মধ্যে চাপা চাপা কী সব প্রশ্ন যেন আগেও আনাগোনা করেছে; কিন্তু নতুন সংসার আর বিদেশের ঘরবাড়ি গোছানোর নানা কাজে অনামিকা সেসব প্রশ্ন চেপে রেখেছিল। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাশা বাসায় ফিরলে ও বলল, আচ্ছা আশপাশে কি একজন বাঙালিও নেই? কেউ একটা ফোন করল না এই কদিনে?’
‘না বাঙালি নেই।’
‘কত দূরে আছে তারা?’ ‘তো আমরা সেখানে যেতে পারি না? আশপাশে দুএকজন বাংলায় কথা বলার মানুষ না থাকলে কেমন লাগে?’
‘যে কোনো জায়গায় তো মনমতো চাকরি পাওয়া যায় না। তাই বাঙালি আছে কিনা ওটা দেখে এ জায়গায় আসিনি।’
‘আচ্ছা তোমার অফিসের কাছে বাসা নাও। তাহলে অন্তত এই কষ্টটা করতে হতো না। দুপুরে বাসায় খেতেও পারতে।
‘ওখানে দুএকটা কনডোমোনিয়াম আছে, সেগুলোর ভাড়া খুব বেশি।’
‘ঠিক আছে। আমাকে তাহলে অন্তত তোমার অফিসে একদিন নিয়ে চলো। তাতে তোমার বস বা আমেরিকান সহকর্মীদের সঙ্গে পরিচয়টা তো হতো।’
‘আচ্ছা নেব একদিন।’ অনামিকা একটু চিন্তা করে এবং স্বামীর মুখের দিকে তাকায়। তারপর বলে, অনেকের কাছে শুনেছি ফার্মেসিতে পাস করা বাংলাদেশিরা এখানে সরাসরি প্রোফেশনাল চাকরিতে ঢুকতে পারে।
‘তুমি যখন বললে, এখন থেকে ওয়েবসাইট আর পেপার দেখব।
অনামিকা বলে, ‘নিউইয়র্ক কেমন হয়? শুনেছি ওখানে দেশের অনেক মানুষ আছে।’
নিউইয়র্কে মানুষের ভিড়। চাকরির বাজারে দারুণ প্রতিযোগিতা।
দুমাস পার হয়েছে। মিসোওরি নদী, ক্যামডেন পার্ক, দুএকজন হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়া বাঙালি, বরফ আর তুষারের মধ্যে সূর্যের আলোর লুকোচুরি খেলা আর পাখির কিচিরমিচির শোনার আনন্দে অনামিকার দিন ভালোই কেটেছে। ও ওয়েবসাইটে চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলোও দেখে নেয়।
কোম্পানিগুলো অত্যন্ত ভদ্র। ফলাফল যাই হোক প্রত্যেকটি ই-মেইলেরই এরা উত্তর দেয়। তবে, ও যা চাচ্ছে তা পাচ্ছে না। রাশা বাইরে থাকলে অনামিকা এখন একাকী শপিংয়েও বের হচ্ছে। টিভি দেখার পর এবং রাশা ফেরার আগে একটু সময় পাওয়া যায়। তখন ও আলমারি আর চেস্ট অব ড্রয়ারের কাপড়-চোপড় আর জিনিসপত্র বের করে আবার সাজিয়ে রাখে। এমনই একদিন চেস্ট অব ড্রয়ারসের খবরের কাগজের নিচে হঠাৎ ওর চোখ আটকে যায়। কিছুক্ষণ চিন্তা করে ও কাপড় বদলায়। বাসা থেকে বেরিয়ে প্রথমে বাসে তারপর ট্রেনে এবং শেষে একটি ট্যাক্সি ক্যাবে করে ও একটি ঠিকানায় এসে নামে। ঠিকানাটি ওয়েবপেজ থেকে নেওয়া।
আজ শনিবার। রাশা সন্ধ্যার সময় কাজ থেকে ফিরেছে। কাল বন্ধ। ভালো শীত পড়েছে। অনামিকা চা বানিয়ে টেবিলে রেখেছে। ফায়ার প্লেসের সামনে একটি সোফায় ও বসে আছে। হাত-মুখ ধুয়ে রাশাও একটি চেয়ারে বসে চা-এর কাপ হাতে।
‘তুমি চা নেবে না?’
রাশার প্রশ্নে অনামিকা বলে, ‘না আজ দুপুরে চা খেয়েছি’ এখন আর নেব না।’ ওর মুখে বেশ হাসি। ও একটু চিন্তা করে বলে, তুমি যেখানে কাজ কর ওই কোম্পানির নামটি কী যেন?’
‘কেন বলেছি না, সোরেনসেন অ্যান্ড কোম্পানি।’
‘না মানে আজ পর্যন্ত নিলে না একবারও।’
অস্বস্তিকর প্রশ্নে মানুষ ভালো বোধ করে না। রাশার মুখচোখে তেমনি একটি ভাব ফুটে উঠেই মিলিয়ে যায়। অনামিকার সুন্দর মুখে এখন হাসি আরও বিস্তৃত।
ও এবার বলে- তুমি ওখানে কী কর?
‘দেখ তোমার বাবা, আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় পাস করেছি কিনা, সে খোঁজ নিয়েছিলেন।’
‘হ্যাঁ তা ঠিক। কিন্তু তুমি এখনো আমার প্রশ্নের উত্তর দাওনি।’
রাশা কোনো উত্তর দেয় না। অনামিকা এবার টেবিল ল্যাম্প রাখার ছোট টেবিলের ড্রয়ার খুলে খবরের কাগজের নিচ থেকে পাওয়া দুটো জিনিস বের করে। চিৎকার দিয়ে বলে, এ দুটো কী? এগুলো দিয়ে তুমি কী কর, বল?
এখানকার নাটবল্টু মিস্ত্রিরা এগুলো ব্যবহার করে থাকে। লোহার গুঁড়ো এবং ও ধরনের বর্জ্য থেকে হাতকে রক্ষা করাই এ গ্লাভসগুলোর কাজ। রাশা ওদিকে তাকিয়ে থেকে বলে-
‘ওগুলো তুমি কোথায় পেলে?’
‘ওগুলো আমি কিনে আনিনি। এ বাসায়ই পেয়েছি। বাবাকে সোজা মানুষ পেয়ে ফাঁকি দিতে পারলেও আমাকে পারনি।’
মুখে চোখে আহত হওয়ার চিহ্ন দেখা দিলেও শান্তভাবে রাশা বলে-
‘দেখ তোমরা আমাদের কোনো খোঁজ নিতে বাকি রাখনি। এ খোঁজটি
নিতে ...’
এবার জোরে কেঁদে ফেলে অনামিকা, বলে ইঞ্জিনিয়ারের মিথ্যে পরিচয় দিয়ে আসলে মিস্ত্রির অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছ, তারপরও লজ্জা বোধ না করে তর্ক করছ।
‘এখানে ওই কাজ অনেকেই করছে। স্টেশন ঝাড়ুদার বা মাথায় চোঙ্গা লাগিয়ে ফ্রেঞ্চফ্রাই বিক্রি করছে আমার অনেক ক্লাসমেট। কাজেই এতে লজ্জার কিছু নেই।’
‘তুমি একটা প্রতারক, একটি জঘন্য মিথ্যুক। বাবার মতো সরল লোক পেয়ে আমার মতো একটি মেয়েকে এভাবে বিয়ে করে আমার জীবনটা নষ্ট করেছ। কোনো কনস্টেবল দিয়ে বাবা জীবনে বাসার বাজারটা পর্যন্ত করাননি।’
রাশা উত্তেজিত হয়ে বলতে যাচ্ছিল, ‘এখানকার ক্যাফে আর রেস্তোরাঁগুলোতে তোমার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরীরা চা বিক্রি করছে।’ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে ও তা বলল না। ও যে মিস্ত্রিও নয় তাও অস্বীকার করার পথ নেই। এবার ও বলে, ‘কি পেলে তুমি খুশি হবে অন্তত তা বল?
‘তোমার এই তেত্রিশ বছর বয়সে কী আশা করব? আর কী চাইব আমি? কান্না জড়ানো গলায় ও বলে ‘ঢাকায় চলে যাব।’
‘চিন্তা করে কথা বলছ?’
‘হ্যাঁ, চিন্তা করেই বলছি। তা ছাড়া কোনো কিছুতে আমরা এখনো বাঁধা পড়িনি। কতজনে তো বাচ্চা নিয়েও ডিভোর্স দিচ্ছে। আমি একজন মিথ্যুকের সঙ্গে ঘর করতে পারব না।’
‘দেখ অনামিকা, আমি মিস্ত্রির চেয়ে ছোট কাজ করি বলেই তোমাকে ওয়ার্কশপে এত দিন নিইনি। কিন্তু তারপরও কিছু কথা থাকতে পারে।’
আমার আর কোনো কথা শোনার নেই। তুমি আসলে কী কাজ কর আমি নিজ চোখে একদিন অনেকক্ষণ ধরে দেখে এসেছি।’
‘তবুও এর বাইরে কিছু কথা থাকতে পারে।’
‘দেশ থেকে বারো হাজার মাইল দূরে আমার এ সর্বনাশ করে আর কি সত্য দেখানোর বাকি আছে তোমার?’
‘এ এনভেলপটি পড়ে দেখ।
‘আমি বললে তো তোমার বিশ্বাস হবে না।’
ঘর বাঁধা এবং তা ধরে রাখার প্রবণতা পুরুষের চেয়ে নারীর অনেক বেশি। তারপরও রাগে এবং কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে এনভেলপটি খুলতে গিয়ে অনামিকা এনভেলপ এবং ভিতরের চিঠিটার এক মাথা কিছুটা ছিঁড়ে ফেলল। নীল ঝকঝকে ছাপার লেখায় আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স রাশাকে জানাচ্ছে যে, ও গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ইকুইভ্যালেন্স পরীক্ষায় প্রায় সব কটি পেপারে পাস করেছে। একটি পেপারে ওর পারফরম্যান্স সন্তোষজনক না হলেও সামগ্রিক নম্বরের ওপর ভিত্তি করে ওকে ওই পেপারটিতে একজেমপশন দেওয়া হয়েছে। ফলে ও এখন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরির জন্য আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এ তথ্য জানানোর পাশাপাশি ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ওর গর্বিত পিতা-মাতাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।
গাড়িতে বসে চোখের সামনে নিজের স্বামীকে গজালো, পেরেক আর প্লায়ারস বিক্রি করতে দেখে অনামিকার স্বপ্নভঙ্গ এবং প্রতারিত হওয়ার অপমানবোধ মনের মধ্যে চেপে বসেছিল।
রাশা নরম করে এবার বলল, ‘একজন মিথ্যুক এবং প্রতারকের কথা একটি কাগজ দেখেই তোমার কাছে সত্য বলে মনে হবে, তা আশা করি না। তবে ওই চিঠিতে শুধু ই-মেইল নয়, টেলিফোন নম্বরও দেওয়া আছে। যে কেউ ফোন করে অন্য যে কারও পরীক্ষার রেজাল্ট ওখান থেকে জেনে নিতে পারে।’
অনামিকার হঠাৎ মনে হতে থাকে, এখানে আসার পর থেকে ওর সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে কেন যেন সব সময় একটু দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখা যেত। ও স্ত্রীর কাছেও কী যেন লুকাতে চেষ্টা করত। কিন্তু এখন আর সেরকম মনে হচ্ছে না। রাশার চোখের দিকে তাকিয়ে ওর মনে হতে থাকে, মিথ্যাকে সত্য বলে চালানোর জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন হয়, এ লোকটির চোখেমুখে তা নেই। সারা দিনের পরিশ্রম আর এতক্ষণের ঝগড়ায় ক্লান্ত হলেও এ মুহূর্তে মানুষটিকে ভারমুক্ত আর নিরুদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে।
অনামিকা শান্তভাবে সোফায় বসে আস্তে করে বলে, ‘তুমি কি এ পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলে বলেই এমন করেছিলে?’
‘নিশ্চিন্ত ছিলাম না; তবে বিয়ে করার আগের দেড় বছর প্রত্যেক দিন দশ ঘণ্টা করে পড়া আর আট ঘণ্টা কাজ করা ছাড়া একটি মিনিটের জন্য বাড়ির বাইরে যাইনি। তাই মনে হতো এ কষ্ট হয়তো ব্যর্থ নাও হতে পারে।’
এ বরফ পড়ার মধ্যেও বাইরে যে কখন চাঁদ উঠেছে তা ওরা লক্ষ্য করেনি। চাঁদের আলো কাচের জানালা ভেদ করে কার্পেটের ওপর পড়েছে।
অনামিকা রাশার চেয়ারটির পেছনে এসে দাঁড়ায়। ওর পিঠে হাত দিয়ে বলে, মা বলতেন হাজার কথা ছাড়া বিয়ে পাকা হয় না। অথচ আমাদের বিয়েটি কেমন হুট করে প্রায় কোনো কথাবার্তা ছাড়াই হয়ে গেছিল। পাকা হওয়ার কাজটি বোধ হয় বাকি ছিল। মনে হচ্ছে সে পর্বটি আজ এখানে পূর্ণ হলো। যদিও ওই কাজটি করার কথা ছিল গার্জিয়ানদের।
‘আমি তো আবার প্রতারক। তবু একটি কথা বলব কিনা ভাবছি।’
অনামিকার মুখে এখন হাসি হাসি ভাব। সারা রাত বৃষ্টির পর ভোরে আকাশ পরিষ্কার হওয়ার মতো।
‘কী বলবে?’
‘বলছিলাম গার্জিয়ানরা করেননি তাতে কী হয়েছে? দেশে তো এখন সব কিছু বেসরকারীকরণের এক ধুম চলছে। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিও না হয় প্রাইভেট সেক্টরই করে নিল।’ অনামিকা হেসে ওঠে।
অনামিকার নিজের পড়াশোনার কষ্টের কথা মনে হতে থাকে। আস্তে করে বলে, ‘একটু অধৈর্য হয়ে গিয়েছিলাম, তাই তো জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য যে বেশ কষ্ট করতে হয় সে বাস্তবতাটি ভুলে গিয়েছিলাম। বিশেষ করে দোকানের দৃশ্য দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল।’
‘ওতে তোমার দোষ নেই। আর আমিও ভাবতাম হয়তো আমার সাময়িক পরিচয়টি বের হয়ে যাওয়ার আগেই আমি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কোথাও জয়েন করে ফেলতে পারব। কিন্তু অল্পের জন্য তা হলো না।’
‘থাক ও কথা ভুলে যাও। অন্য কারও কাছে তো আর নয়, না হয় বউয়ের কাছেই ধরা পড়েছেন।
রাশা বলে, ‘বাইরে থেকে ফেরার সময় ভাবছিলাম কোথাও জয়েন করে সেলিব্রেট করব দুজনে। তার মধ্যে এই বমাল গ্রেপ্তার।’
অনামিকা বলে, তাতে কিছু হয়নি। প্রাইমারি একটি ঘরোয়া খাওয়া আজই হয়ে যাক।
এমন রাত কি জীবনে আর আসবে?