শনিবার, ২১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
কক্সবাজারে তিন পর্যটকের মৃত্যু

পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগে দুই মামলা রেকর্ড

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারে পৃথক স্থানে পরপর তিন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। নিহত দুই তরুণীর অভিভাবক বাদী হয়ে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেন। যার মধ্যে হোটেল বিচ হলিডেতে অবস্থানকারী লাবণী আকতারের (১৯) মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা মনির হোসেন বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) জানান, বৃহস্পতিবার সকালে মামলাটি হয়। যেখানে চারজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামির মধ্যে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার জাহাঙ্গীরের ছেলে কামরুল আলম (২০) ও আবদুর রহমানের ছেলে আরিফ রহমান নিলু (২১) আটকের পর ৫৪ ধারায় কারা হেফাজতে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন অন্য শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোশাররফ হোসেনের ছেলে তানজিল হাসান (২১) ও নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা মাহিম হাসান অনীক (২০)।

ওসি সেলিম জানান, মামলার এজাহারে বাবা তার মেয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বের হয়েছিলেন এবং অভিযুক্ত চারজন কৌশলে তার মেয়েকে কক্সবাজার এনে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করেন।

ওসি জানান, ১১ মে চার বন্ধুসহ কক্সবাজার আসেন লাবণী। এসে কলাতলীর বিচ হলিডে নামে একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেন। সেখানে ১৪ মে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৬ মে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় সঙ্গে আসা চারজনের মধ্যে দুজন স্বীকার করেন তারা অতিরিক্ত মদপান করেছিলেন। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হলেও অন্য দুজন পালিয়ে গেছেন। বুধবার (১৮ মে) দুপুরে লাবণী হাসপাতালে মারা যান।

অন্যদিকে বুধবার সন্ধ্যায় হোটেল রয়েল টিউলিপে অবস্থান নেওয়া মাফুয়া খানমের (২৯) মৃত্যুর ঘটনায় তার ভাই ছৈয়দুল ইসলাম বাদী হয়ে উখিয়া থানায় মামলা করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজি সালা উদ্দিন।

উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে নাছির উদ্দিন নামে একজনকে আসামি করে মামলাটি হয়। ওসি আরও জানান, বুধবার সকালে গোপালগঞ্জের মাফুয়া খানম নামের ওই নারী দিনাজপুরের যুবক নাছির উদ্দিনের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেল রয়েল টিউলিপে ওঠেন। দুপুরে খাবার শেষে দুজনই নিজেদের কক্ষে অবস্থান নেন। এর কিছুক্ষণ পর মাফুয়ার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কথা অবহিত করা হলে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তারা স্বামী-স্ত্রী ছিলেন না। প্রেমের সম্পর্কের জেরে তার বোনকে কক্সবাজার এনে হত্যা করা হয় বলে এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় নাছির উদ্দিন পুলিশে আটক রয়েছেন।

এদিকে, কক্সবাজারের হোটেল সি গালে বুধবার রাতে মনিরুল ইসলাম (৪০) নামে এক পর্যটকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় স্ত্রীপরিচয়ে তার সঙ্গে হোটেলে ওঠা লিজা রহমান ঊর্মিকে (৩৫) পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন।

তিনি জানান, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দুজন বুধবার (১৮ মে) বিকাল সাড়ে ৫টায় সি গাল হোটেলের ৭২৪ নম্বর কক্ষে অবস্থান নেন। ওখানে রাত সাড়ে ১২টার দিকে অসুস্থতা বোধ করলে পর্যটক মনিরুলকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হয়। রাত ১টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় স্ত্রী পরিচয়ে সঙ্গে থাকা নারীকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। কিন্তু তারা স্বামী-স্ত্রী নন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক নারী স্বীকার করেছেন। নিহত পুরুষের স্বজনদের খবর পাঠানো হয়েছে। এলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দুই নারীসহ তিন পর্যটক মৃত্যুর ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত দুই নারীর পক্ষে করা মামলা লিপিবদ্ধ হয়েছে। অন্য পর্যটকের আত্মীয়রা এলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর