রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

রণক্ষেত্র কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

মধ্যরাত থেকে দফায় দফায় ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, আহত ৩০

কুমিল্লা প্রতিনিধি

রণক্ষেত্র কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে দুই পক্ষ

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। শুক্রবার দুপুর থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের মধ্যে অন্তত ছয় দফা সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কয়েকজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের আগে কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগ নেতা ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল রায়হানকে নামাজে যাওয়ার জন্য পথ দেওয়াকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মাঝে হাতাহাতি হয়। আশরাফুল রায়হান বঙ্গবন্ধু হল হয়ে মসজিদে যাচ্ছিলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের কর্মী সেলিম রেজা ও রিফাতসহ কয়েকজন তার সামনে দিয়ে ধীরগতিতে হাঁটছিলেন। তাদের পথ দিতে বলেন আশরাফুল রায়হান। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে নামাজ শেষে আশরাফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রেজা ও রিফাতরা। এ থেকেই বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তারা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন উভয় হলের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনার রেশ ধরে ওইদিন সন্ধ্যায় নজরুল হলের ছাত্রলীগ কর্মী আবরারকে মারধর করেন বঙ্গবন্ধু হলের আকরাম ও সালাউদ্দিন সোহাগ নামে কয়েক ছাত্রলীগ কর্মী। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় উভয় হলের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। একে অপরকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিভিন্ন নেতা-কর্মীর হাতে লাঠি, রডসহ দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনেন প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যরা।

এ ঘটনার পরই উভয় হলের ফটক বন্ধ রাখে হল প্রশাসন। তবে গতকাল দুপুরে খাবারের জন্য কয়েকজন বিচ্ছিন্নভাবে হল থেকে বের হতে থাকে। দুপুর ২টার দিকে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও নজরুল হল ছাত্রলীগ কর্মী তানভীর আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে খেতে গেলে তাকে মারধর করে বঙ্গবন্ধু হলের কয়েক কর্মী। এ ঘটনার জেরে ফের উত্তপ্ত হয়ে পড়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর উভয় হলের নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকে প্রধান ফটকে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যেই ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এ বি এস ফরহাদ আহত হন। আরও আহত হন বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাৎ মো. সায়েম, একই হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার সাকিব, সাংগঠনিক সম্পাদক পাপন মিয়াজী, ছাত্রলীগ কর্মী কাউসার, সেলিম, মিরহাম রেজা, রাশেদ, বিজয় ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ, একই হলের কর্মী বায়েজিদ আহমেদ বাপ্পী, ফয়সাল, কামরুল, সাগর দেবনাথ, এমরান, আশিক, জামান, জয়রাজ, তানভীর, নাহিয়ান ও নাজিমসহ অন্তত ২৫ জন। এর মধ্যে বায়েজিদ আহমেদ বাপ্পীর মাথায় ১৬টি সেলাই লেগেছে বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উভয় হলের নেতা-কর্মীকে হলে আটকে রেখে আলোচনায় বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও উভয় হল প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীরা। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, এমন ঘটনা এই কমিটির প্রথম। হয়তো এটি আমাদের ব্যর্থতা। দুই হলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আমি অভিযোগ শুনেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ বসে বিষয়টি মীমাংসা করবে। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি। অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর