স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা। পরিমাণে কম হলেও সড়কে গতকাল গণপরিবহন চলতে শুরু করে। সড়কে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। প্রধান সড়কের বেশির ভাগ রিকশাচালকের দখলে থাকলেও চোখে পড়ে প্রাইভেট কারের উপস্থিতিও। ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন ছাত্ররা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু না করলেও শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে নগরীর স্কুল-কলেজ। বিভিন্ন দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে খুব দ্রুত কর্মব্যস্ত ঢাকা শহর তার আগের রূপে ফিরে আসবে। দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। গতকাল দিন বাড়ার সঙ্গে সড়কে গণপরিবহনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাইভেট কার ও পণ্যবাহী গাড়ির উপস্থিতি বাড়তে থাকে। রিকশার সংখ্যা বেশি থাকলেও চোখে পড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বিআরটিসির বাসসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাস। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাইভেট গাড়িসহ মোটরসাইকেল আরোহীদের চোখে পড়ে। প্রধান সড়কে মুদি দোকান, রেস্টুরেন্ট ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলতে দেখা যায়। ক্রেতা উপস্থিতি কম থাকলেও ব্যবসায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেকে দোকানপাট খুলেছেন বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান। ঢাকার সংসদ ভবন-সংলগ্ন চন্দ্রিমা উদ্যান, গণভবন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বেশ কিছু স্থানে উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা যায়।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গতকাল এক বিবৃতিতে পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতি ঘোষণা করেন। এতে রাজধানীজুড়ে এদিন ট্রাফিক পুলিশের দেখা মেলেনি। ছাত্র-জনতা নিজেদের কাঁধে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব তুলে নেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর, আগারগাঁও মোড়, বিজয় সরণি, ধানমন্ডি, আসাদগেট, ফার্মগেটসহ নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে ছাত্রদের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। এ সময় তারা হাতে স্টপ প্ল্যাকার্ড ও কাঠের লাঠি নিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন। গাড়িচালকদেরও তাদের সহযোগিতা করতে দেখা যায়। কথা হলে মিরপুর-১০ নম্বরে এক শিক্ষার্থী সিফাত হোসেন বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আহ্বানে সকাল থেকে সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছি। সাধারণ মানুষ আমাদের সহযোগিতা করছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে দেখা যায়।
জান-মালের নিরাপত্তা দানের আহ্বান হেফাজতে ইসলামের : রাষ্ট্রের সম্পদ, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাদানের আহ্বান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারায় গতকাল নির্বাহী কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে এ আহ্বান জানানো হয়। হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী বলেন, হাজারো প্রাণের বিনিময়ে ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জালেম সরকারের পতন ঘটেছে। অনুগ্রহ করে কেউ প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। এ ছাড়া সারা দেশ থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার খবর জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন- চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরে অফিসগামী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। রংপুর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে নিরাপত্তা দিচ্ছেন স্থানীয় মানুষসহ শিক্ষার্থীরা।