রাজধানীর পান্থপথের দৃক পাঠ ভবনে ১৬ আগস্ট শুক্রবার শুরু হয় ‘কার্টুনে বিদ্রোহ’ শিরোনামের প্রদর্শনী। গতকাল সোমবার ছিল আট দিনের এই প্রদর্শনীর চতুর্থ দিন। গতকাল বিকাল থেকে রাত আটটায় গ্যালারি বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহীদুল আলম বলেন- এগুলো নিছক কার্টুন নয়, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে দেশের আপামর জনসাধারণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ও দ্রোহের আগুন। পেছনে মুষ্টিবদ্ধ অনেক হাত। সামনে সিংহাসনে বসে আছে সদ্যবিদায়ী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। পাশ থেকে উঁঁকি মেরে ওবায়দুল কাদের জিজ্ঞাসা করছেন- ‘আপা কী করছেন? শেখ হাসিনার জবাব- জনগণের সাথে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলি’, হাসিনাকে ডাইনির বেশে তুলে ধরা আরেক কার্টুনের সামনে লেখা ‘গণদুশমন’, আরেকটিতে একপাশে স্বাধীনতাবিরোধী ধরে এনে হাসিনার কাছে দিচ্ছেন ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা ও জামায়াত বিএনপি ধরে এনে দিচ্ছেন পুলিশ, আর সেসব একটা বড় পাত্রে ঢেলে প্রোপাগান্ডা নামের রেসিপি তৈরি করছেন শেখ হাসিনা, অন্য কার্টুনে পুলিশের কাঁধে চড়ে ছাত্র-জনতার রক্ত পানে এগিয়ে এসেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, অন্য একটা কার্টুনে ড. ইউনূসকে শপথ পাঠ করাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি আর স্তূপে স্তূপে সাজানো টাকার সামনে বসে সেই দৃশ্য দেখে ক্রন্দনরত হাসিনা চোখ মুচছেন, হাসিনার আরেকটা কার্টুনের সামনে লেখা ‘হুকুমের আসামি’ ও আরেকটিতে লেখা ‘নাটক কম করো পিও’, আরেকটিতে পলায়নরত হাসিনার পেছন থেকে জুতা নিক্ষেপ, কার্টুনে নৌকাডুবির দৃশ্য উঠে এসেছে। আবার আরেকটিতে এক পুলিশ সদস্য তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লাশের হিসাব দেখিয়ে বলছেন- ‘স্যার আজকে এতগুলোকে গুলি করে মেরেছি’। আরেকটিতে আয়নায় শেখ হাসিনার কার্টুনে লেখা- স্বৈরাচারের প্রতিবিম্ব। অন্যটিতে পুলিশ কর্মকর্তা হেলমেট পরিহিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীকে মোবাইল ফোনে বলছে- ‘কাজ শেষ হলে জানাইও, অন্য প্রান্ত থেকে হেলমেট পরিহিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বলছে- ‘ওকে ভাই স্লামালাইকুম।’ কিছু কার্টুনে উঠে এসেছে পুলিশের গুলিতে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের ওপর গুলিবর্ষণের চিত্র। এমন সব কার্টুন দিয়েই শেখ হাসিনার প্রতি ঘৃণা ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করেছেন শিল্পীরা। গ্যালারির পাশে রাখা ছিল মন্তব্য বোর্ড। সেই বোর্ডে দর্শনার্থীরা শেখ হাসিনার প্রতি ঘৃণা জানিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য লিখে যান। গ্রিন রোড থেকে দুই অবুঝ বাচ্চাকে নিয়ে গ্যালারিতে আসেন এক মমতাময়ী মা। শেখ হাসিনার একটা কার্টুন দেখিয়ে বাচ্চাটি তার মাকে জিজ্ঞসো করল- ‘আম্মু দেখো দেখো খুনি হাসিনাকে ডাইনির মতো লাগছে’। তখন মা বাচ্চাকে বলল- ‘হ্যাঁ বাবা এই ডাইনিই আমাদের কোমলমতি ছাত্রদের খুন করে আবার নাটকও করেছে। এই মহিলা শুধু খুনিই নয় নাটকবাজও। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবশ্রেণির দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনীর গ্যালারি। ২৩ আগস্ট শুক্রবার শেষ হবে আট দিনের এই প্রদর্শনী।