সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনারাম গ্রামে নির্মাণাধীন ভবনের নিচের রহস্যময় আয়নাঘরটি নিয়ে রহস্যের জট এখনো খোলেনি। কবর আকৃতির ওই ঘরে শিল্পী খাতুন (৩৮) এবং আবদুল জুব্বার (৭৫) প্রায় পাঁচ মাস বন্দি থাকার পর শুক্রবার ভোরে মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে আসেন। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন আয়নাঘর দেখার জন্য।
সরেজমিনে সোনারাম গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের নিচে গুপ্তঘর রয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতা ওই ঘরটি ভেঙে ফেলেছে। ঘরটির প্রতিটি কক্ষ একেকটি কবরের সমান। সামনে রয়েছে করিডর। এ ছাড়া প্রতিটি কক্ষে প্রবেশের জন্য ছোট ফটক রয়েছে। ঘরের পূর্ব কোণায় একটি মাটির সুড়ঙ্গ দেখা যায়। যে সুড়ঙ্গ দিয়ে ওই নারী ও বৃদ্ধ পালিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এ সময় স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত আরাফাত কখনো সাংবাদিক, কখনো সমন্বয়কের পরিচয়ে এলাকায় দাপটে ঘুরতেন। তিনি পল্লি চিকিৎসক হলেও তার কোনো সনদ নেই। তার ভাই নাঈম আহমেদ বাঁধন ঢাকার সাভারের এনাম মেডিকেলের চিকিৎসক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে তৎকালীন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এনামের দাপট দেখিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতেন। আরাফাতের বিরুদ্ধে আগে থেকেই মামলাবাজি, চুরি ও ব্ল্যাকমেইলসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তবে আয়নাঘরে মানুষ আটকে রাখার বিষয়টি সবারই অজানা ছিল। তবে স্থানীয় জুয়েল নামে এক ব্যক্তি বলেন, আরাফাত মানুষকে অপহরণ করে এনে এ গোপন ঘরে আটকে রাখতেন। এ চক্রটি কিডনি পাচারের সঙ্গেও জড়িত থাকতে পারে।
ভুক্তভোগী শিল্পী খাতুন বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে তাকে তুলে নিয়ে যান আরাফাত। এরপর হাত-পা বেঁধে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে প্রায় চার মাস আগে ওই গোপন ঘরটিতে রাখেন। সেখানে আগে থেকেই ওই বৃদ্ধকে রাখা হয়েছিল। আরাফাত তাদের মেরে কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির কথাও বলেছিলেন। আবদুল জুব্বার বলেন, তার কাছ থেকে আট বিঘা সম্পত্তি লিখে নেওয়ার চেষ্টা করেছে আরাফাত। সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় ব্যাপক নির্যাতন করেছে। গোপন ঘরে তাদের দিনে একবার খেতে দেওয়া হতো। গোসলের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. জিয়াউর রহমান জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আমরা তেমন কিছু পাইনি। আসামি একজন ধরা পড়েছে, তাকে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্তের পর প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করা যাবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুমায়ন কবীর জানান, ওই ভবনের নিচের অংশের সবকিছু আগের মতো রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের স্বার্থে সব ধরনের সহযোগিতাও করা হবে।