চট্টগ্রামে দুই সপ্তাহ আগেও ৫০ পিসের এক বক্স মাস্ক বিক্রি হয়েছিল মানভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। আকারভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছে হেক্সিসল ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের। এভাবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আগেই সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে শুরু হয়েছে চরম নৈরাজ্য। বাজারে তৈরি করা হচ্ছে কৃত্রিম সংকট।
কিন্তু হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধি হওয়ায় অনেকেই কিনছেন না এসব সুরক্ষা সামগ্রী। ফলে সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এর আগে ২০২০ সালে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির পর আকাশচুম্বী মূল্যে বিক্রি করা হয়েছিল এসব সামগ্রী। ১৬ জুন চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়। জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের রেয়াজুদ্দিন বাজার, গোলাম রসুল মার্কেট, তামাকুমণ্ডি লেন ও হাজারি গলিতে পাইকারি মূল্যে করোনা প্রতিরোধের উপকরণগুলো বিক্রি করা হয়। কিন্তু কোরবানি ঈদের পর পরই এসব সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি হওয়া শুরু হয়। পাইকারিতে দাম বাড়াতে খুচরায় এর প্রভাব পড়ছে। তা ছাড়া এরই মধ্যে কোম্পানিগুলো হেক্সিসল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবং জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করে এর সত্যতা পান।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, করোনা আসার খবরে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সুরক্ষা সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি করছে বলে খবর পেয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরেজমিন পরিদর্শন করে তার সত্যতাও পান। সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। মহামারি নিয়ে কোনো বাণিজ্য না করার জন্য অনুরোধ করেছি। আগামীতে কাউকে মহামারি নিয়ে বাণিজ্য করতে দেওয়া হবে না। চসিক ও জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়মিত তদারকি করবেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মাস্ক ইজ মাস্ট। মাস্ক ব্যবহার করলে সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু করোনা আসতে না আসতেই অনেক ব্যবসায়ীর মাস্ক নিয়ে বাণিজ্য শুরু করার খবর পেয়েছি। বিষয়টা আমরা জেলা প্রশাসন ও চসিককে অবহিত করেছি। তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবেন। আশা করি, ব্যবসায়ীরাও সচেতন ও মানবিক হবেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, আমরা একদিন ক্রেতা বেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে মাস্ক কিনতে গিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রির সত্যতা পাই। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুটি অভিযানে তিনটি দোকানকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে। করোনা সামগ্রী নিয়ে কারও বাণিজ্য করার সুযোগ নেই। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন করে আরও ছয়জন করোনায় আক্রান্ত হন। নগরের ছয়টি ল্যাবে ৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ছয়জন পজিটিভ শনাক্ত হয়। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত হয় ৫৬ জন। নতুন আক্রান্তরা নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।