ঐতিহ্যবাহী ব্রোঞ্জের গয়না ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি সনদ পেয়েছে। এটি জেলার দ্বিতীয় পণ্য হিসেবে ভৌগোলিক নির্দেশকের স্বীকৃতি অর্জন করল। এর আগে গোপালগঞ্জের রসগোল্লা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছিল। এ স্বীকৃতিতে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া ব্রোঞ্জের গয়না তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত কারিগরদের কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়ক হবে। এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, এ শিল্পে উৎপাদিত গয়না বিপণনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জের ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে এ পণ্যের আউটলেট স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে এ শিল্পকে যুগোপযোগী করা হবে। জেলা প্রশাসক জানান, গত বছরের ১২ মার্চ মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার জিআই পণ্যের স্বীকৃতি চেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট শিল্প মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে আবেদন করা হয়। পরে যাচাই-বাছাই করে ওই বছরের ১০ জুলাই জিআই পণ্য হিসেবে ব্রোঞ্জের গয়না নিবন্ধনের জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩ এর ধারা ১২ অনুসারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর কর্তৃক জার্নাল প্রকাশিত হয়।
গত ৩০ এপ্রিল ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামানের হাতে ব্রোঞ্জ গয়নার জিআই সনদ তুলে দেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
ব্রোঞ্জ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও জলিরপাড় ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সুভাষ বৈদ্য বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডেই ব্রোঞ্জের গয়না তৈরির পল্লি প্রায় ১০০ বছর আগে গড়ে ওঠে। পরে এটি সারা জলিরপাড় ইউনিয়নের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ পল্লিকে কেন্দ্র করে এখানে ব্রোঞ্জ মার্কেট প্রতিষ্ঠিত হয়। জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়নার সুখ্যাতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে এটি বিদেশের বাজার দখল করে নেয়। কিন্তু এ শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। তাই সম্প্রতি চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ব্রোঞ্জের গয়না আমাদের বাজারের প্রায় ৫০ ভাগ দখল করে দিয়েছে। তারপরও জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গয়না তৈরি শিল্প সগৌরবে শতাধিক পরিবার টিকে রয়েছে। জলিরপাড় ব্রোঞ্জ মার্কেটে এখনো ৪৫টি ব্রোঞ্জের দোকান রয়েছে।’ ব্রোঞ্জের গয়না প্রস্তুতকারক জগদীশ কর্মকার বলেন, ‘চীন, ভারতসহ অন্যান্য দেশের ব্রোঞ্জ গয়নার রং খুব চকচকে। আমাদের গয়নার রং তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। দৃষ্টিনন্দন, কারুকাজ খচিত অভিজাত ও শৌখিন গয়নার বাজার ভারত ও চীনের দখলে চলে গেছে। তাই কানের দুল, মাদুলি, হাতের বয়লাসহ যেসব গয়নার চাহিদা রয়েছে, এমন সব গয়না আমরা তৈরি করি। সরকার এ শিল্পকে আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও সব ধরনের সহযোগিতা করলে আমরা ব্রোঞ্জ গয়নার শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারব।’
ব্রোঞ্জের গয়না প্রস্তুতকারক মিহির কীর্ত্তনীয়া বলেন, ‘আমাদের ব্রোঞ্জের গয়না কেমিক্যাল দিয়ে পালিশ করলে তামার কালার আসে। স্বর্ণের মতো চকচকে ইমিটেশন কালার হয় না। ভারত, চীনের ব্রোঞ্জের গয়নার কালার স্বর্ণের মতো জ্বলজ্বল করে। তাই ভারত, চীনের ব্রোঞ্জের গয়না সব শ্রেণির নারীর কাছে সমাদৃত। আমাদের গয়না প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ, কালার ও অত্যাধুনিক মেশিনসহ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা এ শিল্পের পুনর্জাগরণ ঘটাতে পারব।’