কারুকাজ, রঙের ব্যবহার এবং নির্মাণ কৌশলের দিক দিয়ে উদ্ভাবনী কুশলতার এক অপূর্ব নিদর্শন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত পোদ্দারবাড়ি। বাড়িটির ইটের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই- লোহার তৈরি ব্র্যাকেট, ভেন্টিলেটর আর জানালার গ্রিল। মেঝেতে রয়েছে লাল, সাদা, কালো মোজাইকের কারুকাজ। বাড়িটির খিলান ও ছাদের মধ্যবর্তী স্থানে আছে নীল ও সাদা ছাপ। নকশা ও কাস্ট আয়রনের কাজ নিখুঁত। দোতলা এ বাড়ির স্থাপত্যে মোগল, গ্রিক এবং গান্ধারা স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে স্থানীয় কারিগরদের শিল্পকুশলতার অপূর্ব সংমিশ্রণ দেখা যায়।
অন্দরমহলে রমণীদের জন্য রয়েছে তিন দিকে তিনটি শান বাঁধানো ঘাটসমৃদ্ধ পুকুর। বাড়ির চারদিকের ঘেরাটোপের ভিতর আছে উন্মুক্ত উঠান। পানি সরবরাহের জন্য দুই পাশে দুটি খাল ও দুটি পুকুর আছে। সুপেয় পানির জন্য আছে গভীর কূপ। দোতলা লাল দালানটি বৈঠকখানা। ১১০ কক্ষবিশিষ্ট এ পোদ্দার বাড়িতে আছে মন্দির, গোসলখানা, নাচঘর, পান্থশালা, চিত্রশালা, খাজাঞ্চিখানা, দরবার কক্ষ, গুপ্ত পথ, বৈঠকখানা ও আঁতুড়ঘর। প্রধান ফটকের বাইরে দক্ষিণ দিকের শান বাঁধানো পুকুর ঘেঁষে মোগল আদলের নকশা সমৃদ্ধ ফটকের ভিতরে বিশাল ফুলের বাগান, আছে খেলার মাঠ। শত শত বছরের অযত্ন-অবহেলায় জরাজীর্ণ চিহ্ন গায়ে মেখে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে প্রাসাদোপম পোদ্দার বাড়ি।
এ বাড়িটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পঙ্খীরাজ খাল। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়ের প্রাচীন জনপদ পানাম নগরীর জমিদাররা দালানের নকশা ও চাহিদা অনুযায়ী নিজেরাই ইট তৈরি করতেন। গোল, লম্বা, তিন কোনা- মোদ্দাকথা চাহিদা অনুযায়ী। পোড়ানো হতো লাল টুকটুক করে সর্বোচ্চ ২ ইঞ্চি পুরো, লম্বা চাহিদামতো। একটি ইটের গল্প অনেক পুরোনো। সোনারগাঁয়ের প্রতিটি ইটের ভাঁজে ভাঁজে সযত্নে গাঁথা আছে ইতিহাস। অসংখ্য ইট, ঘামে ভেজা পেশিবহুল শ্রমিকের শিল্পী মনের নিখুঁত আয়োজনে তৈরি দালানগুলো বহু বছর আগের আভিজাত্যের ইতিহাস। পোদ্দার বাড়ি সেই রকম একটি ইতিহাস গড়া দালান। বাড়িটির অবস্থান ঐতিহাসিক পানাম নগরীর কাছে। বর্তমানে সোনারগাঁ পৌরসভা কার্যালয়ের পূর্ব ও উত্তর পাশ ঘিরে রেখেছে পুরোনো এ বাড়িটি। অযত্ন-অবহেলায় বাড়িটির অনেক স্থাপনা ভেঙে গেছে। এখনো প্রতিদিন একটু একটু করে ধ্বংস হচ্ছে। অনেকেই মনে করেন, উদ্যোগ নিলেই ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল দিনের সাক্ষী হিসেবে লোনা ইট, কালো পাথরের টেরাকোটা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পোদ্দার বাড়ি হতে পারে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ।
পানাম নগরীর দায়িত্বে থাকা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী কাস্টডিয়ান সিয়াম চৌধুরী বলেন, ইতিহাস-ঐতিহ্য ঘেরা সোনারগাঁয়ের পোদ্দার বাড়িটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নেই। বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় আনা হবে কি না- এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।