রাজধানী ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে সাবেক সেনাদের সংগঠন এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, খাগড়াছড়ি-বান্দরবান নিয়ে ‘স্বাধীন জম্মুল্যান্ড’ নামে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র চলছে। স্বাধীন জম্মুল্যান্ড প্রতিষ্ঠায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা ভারত, চীন, মিয়ানমারসহ ইউরোপ থেকে এনজিওর মাধ্যমে অর্থ ও অত্যাধুনিক অস্ত্র পাচ্ছে। এভাবে তারা ড্রোন প্রযুক্তিতেও সজ্জিত হয়েছে। গতকাল প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘অশান্ত পাহাড় সার্বভৌমত্বের হুমকি জাতীয় নিরাপত্তায় করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এসব জানান। সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, লে. (অব.) সাইফুল্লাহ খান। এতে বক্তব্য দেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক জেনারেল (অব.) রোকন উদ্দিন, লে. কর্নেল (অব.) আতিকুল হক, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের মহাসচিব মো. আলমগীর কবির, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রকুনউজ্জামান, জনতার দলের মুখপাত্র মেজর (অব.) ডেল এইচ খান, গণঅধিকার পরিষদের মুখ্যপাত্র ফারুক খান, সিএইচটি সম্প্রসারণ জোটের আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার থোইয়া চিং মং শক প্রমুখ।
সেমিনারের শুরুতে পাওয়ার পয়েন্ট প্রজেন্টেশনে সাইফুল্লাহ খান বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত হওয়ার কারণগুলো হলো- পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম, পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে আধিপত্যের লড়াই, গুজব ও স্যোশাল মিডিয়ায় নানা ধরনের মিথ্যা ও ভুল তথ্য প্রচার, প্রবাসী পাহাড়িদের দ্বারা বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন, উপজাতি নেতাদের বিভিন্ন এনজিও-আইএনজিও এবং বিদেশি কূটনৈতিকদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ, বাঙালি ও উপজাতিদের মধ্যে বৈষম্য, বাঙালিদের অধিকারের অবমূল্যায়ন, বিদেশি সশস্ত্র গ্রুপ বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পাহাড়ি গ্রুপগুলোর যোগাযোগ, পার্শ্ববর্তী দেশের প্ররোচনা ও মদদ, সেনাবাহিনী ক্যাম্প প্রত্যাহার ইত্যাদি।’ তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল অশান্ত হওয়ার জন্য সন্তু লারমা, প্রসীত বিকাশ খীসা, নাথান বম, ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, ইয়েন ইয়েন, মাইকেল চাকমা এবং তাদের সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর পাহাড়ে ১০০০ থেকে ১২০০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। তাতে জেএসএস (সন্তু) চাঁদা আদায় করে ৪৫০ কোটি টাকা, ইউপিডিএফ (প্রসীত) ৩৫০ কোটি টাকা, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ১৫০ কোটি টাকা, এমএনপি ৫০ কোটি টাকা ও কেএনএফ ৫০ কোটি টাকা।’ আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি নিয়ে প্রতি বছর পাহাড়ে গুম, খুনের মতো গুরুতর অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪-এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫-এর অক্টোবর পর্যন্ত জেএসএস ও ইউপিডিএপ-এর মধ্যে অন্তত ৯৬টি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে মোট ২১ হাজার রাউন্ড ফায়ার হয়েছে এবং ৯৬ জন নিহত হয়েছেন।’
সেমিনারে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীলতা ফেরাতে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন পক্ষ থেকে ১২ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- সশস্ত্র গোষ্ঠীকে যেকোনো মূল্যে প্রতিহিত করা, শান্তিচুক্তি রিভিউ করা, ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, ইয়েন ইয়েন, প্রসীত বিকাশ খীসা, নাথান বম, সন্তু লারমাসহ অন্যদের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের জন্য আইনের আওতায় আনা, পাহাড়ে সেনাবাহিনী ক্যাম্প এবং বিজিবির বিওপি বাড়ানো, সেনাবাহিনীর মনোবল বৃদ্ধিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েরর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা, বিশেষ করে হিল ঝুঁকি ভাতা দ্বিগুণ করা, পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি বান্দরবান রাঙ্গামাটিতে আধুনিক মানের চিকিৎসা সেবা সম্বলিত সিএমএইচ স্থাপন করা, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার টহল জোরদার করা, পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি দূরদর্শী পরিকল্পনা করা, বাঙালিদের পাহাড়ে সমঅধিকার নিশ্চিত করা, উপজাতিরা পাহাড়ে জায়গা কিনতে পারলে বাঙালিদেরও জায়গা কিনতে দিতে হবে, উপজাতিদের আয়কর দিতে বাধ্য করতে হবে এবং বিদেশের মাটিতে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে তাদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার করতে হবে। সেমিনারে জনতার দলের মুখপাত্র ডেল এইচ খান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অস্থিরতা কেবল একটি স্থানীয় প্রশাসনিক সংকট নয়; এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের এক গভীর পরীক্ষা।